বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদীতে আড়বাঁধ দিয়ে অতি সুক্ষ্ম জালে ধরা হচ্ছে মা মাছসহ রেনু পোনা

0

খাজুরা (যশোর) সংবাদদাতা ॥ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ‘চিত্রা’ নদীর একচ্ছত্র অধিকার কায়েম করেছেন কিছু অসৎ মৎসজীবী। তারা নদীতে আড়বাঁধ দিয়ে দোয়ারি জাল (অতি সুক্ষ্ম জাল) দিয়ে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মা মাছসহ রেনু পোনা নিধন করছেন। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে যে কোনো সময় প্লাবিত হয়ে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলে সম্প্রদায়ের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মরা চিত্রা নদী ফিরে পায় প্রাণ। এ সময় চিহ্নিত অসৎ মৎসজীবীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ‘জাল যার জলা তার’ হলেও বাস্তবে নদী পাড়ের জেলে, বাগদি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষমতাধরদের হাতে এখন জিম্মি।
সরেজমিনে উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের তৈলকুপ, মাঝিয়ালী, বন্দবিলা ইউনিয়নের মথুরাপুর (কাজিপাড়া), ধর্মগাতী, ঘোপদুর্গাপুর, চন্ডিপুর, বন্দবিলা, বড়খুদড়া ও পাঠান পাইকপাড়া এলাকায় চিত্রা নদীতে প্রায় ১০টি আড়বাঁধ দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে অল্প পানিতে আড়বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করা হয়। দুই হাত পরপর মোটা, লম্বা ও শক্ত বাঁশ পুতে দাঁড় করানো হয় বাঁধের মূল কাঠামো। পানি বেড়ে গেলে নদীর দু প্রান্ত থেকে ছোটছোট বাঁশ পুতে ‘ভি’ আকৃতি করা হয়। এর আগে তৈরি করে রাখা বাঁশের ফালি দিয়ে বানানো চান, পানির গভীর থেকে উপর পর্যন্ত বেড়া দেয়া হয়। বিশেষ এই বেড়ার কাজ পানির প্রবাহকে আটকিয়ে ‘ভি’ আকৃতির শেষ অংশের খোলা মুখে প্রবল ¯্রােত তৈরি করা। সেখানে বিশেষভাবে তৈরি এক প্রকারের জাল পাতা হয়। স্থানীয়রা যাকে ‘সুতি জাল’ বলে থাকেন। জালগুলো এতই সুক্ষ্ম যে পানি
ছাড়া কিছুই বের হতে পারে না। প্রতি দু ঘন্টা পরপর ১৫ থেকে ৩০ হাত লম্বা এই জালে ধরা পড়া মাছগুলো পানি থেকে তোলার আগেই মরে যায়। এলাকায় এসব মাছ বিক্রি করা হয় না। দিন-রাতে সংগ্রহ করা মাছ রাতের আঁধারে শহরে পাঠানো হয়।
এক জেলে জানান, ‘অসৎ এসব মৎসজীবীরা তাদের নদীতে নামতে দিচ্ছে না। ইতঃপূর্বে মাছ ধরতে সুতি (কারেন্ট) জালের ব্যবহার করা হলেও এ বছর ‘দোয়ারি’ জাল ব্যবহৃত হচ্ছে। ভয়ংকর এ জাল চায়নার তৈরি। যা কারেন্ট জালের থেকেও কয়েকগুণ সুক্ষ্ম।’ সাইফুর রহমান নামে এক মৌসুমী মৎসজীবী বলেন, ‘একটি আড়বাঁধে বছরে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। নদীতে এখন দেশি প্রজাতির বোয়ালের পোনার সাইজ দেড় থকে আড়াই ইঞ্চি। এছাড়াও হরেকরকমের দেশি মাছের রেনু পোনা দেখা যাচ্ছে। বিলুপ্ত প্রায় যেসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে নদীতে, যা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই নাম জানে না।’
বাঘারপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ বালা বলেন, ‘আড়বাঁধ উচ্ছেদের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জনানো হয়েছে। প্রশাসনকে ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়াটা আমাদের জন্য ঝুঁকির।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রশাসনকে কোনভাবেই ম্যানেজ করার সুযোগ নেই। দ্রুত অবৈধ আড়বাঁধ উচ্ছেদসহ অসৎ এসব মৎসজীবীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’