২৪ ঘণ্টায় মৃত ১২ জনের অর্ধেকই আইসিইউ ও ৩ এইচডিইউতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা ফের বেড়েছে /৩ # প্রথম দিনেই ১৫২৩ জনের টিকা গ্রহণ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র একদিনের ব্যবধানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা ফের বেড়েছে। শংকার কথা আরও মৃতদের মধ্যে আইসিইউতে চিকিৎসাধীনরা বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৭ জন। এর আগের দিন মারা গিয়েছিল সাত জন, যা ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন।
রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ১২ জনের মধ্যে ৬ জনই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া হাই ডিপেনডেসিয়াম ইউনিটে ( এইচডিইউ) তিন জন ও হাসপাতালের রেড জোনে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।
চিকিৎসাধীন রোগীর একাধিক স্বজন হাসপাতালের আইসিইউ নিয়ে সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যশোরের আইসিইউ নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করেন গতকাল। সেই সূত্রে খোঁজ নিলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১২ জনের অর্ধেকই আইসিইউতে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল ককর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, সোমবার ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ১২ জন এবং উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন পাঁচ জন। এছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতালের রেড জোনে গতকাল ভর্তি রয়েছেন ১৬২ জন এবং ইয়েলো জোনে ৬৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় রেড জোনে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ এবং ইয়েলো জোনে ৩৭ জন। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, সোমবার ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৯৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ৩৪ শতাংশ। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ১৯৩ জন, কেশবপুরে ১২ জন, ঝিকরগাছায় পাঁচজন, অভয়নগরে ৪৫ জন, মনিরামপুরে ১৫ জন, বাঘারপাড়ায় ১১ জন, শার্শায় ১৩ জন, চৌগাছা উপজেলায় ১৭ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন।
বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৩০ জন। এ পর্যন্ত জেলায় শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৬১১ জন, সুস্থ হয়েছেন নয় হাজার ২৭০ জন, করোনা পজেটিভ রোগী মারা গেছেন ২৩০ জন বলে তিনি জানান।
এদিকে গতকাল সোমবার সকাল থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনকৃতদের মধ্যে টিকা আনুষ্ঠানিকভাবে টিকার প্রথম ডোজ প্রদান করা হয়। প্রথম দিনে ১৫২৩ জনকে টিকা প্রদান করা হয় বলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। সকাল সাড়ে আটটার কিছু পর থেকে জেনারেল হাসপাতালের পশ্চিম গেটের পাশের একটি স্থাপনায় এ টিকা দেয়া হয়।
প্রথম দিনেই আগ্রহীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দিনের প্রথম ভাগেই মজুদ টিকা ফুরিয়ে যায়। পরে বেলা ১২টার দিকে সদর উপজেলা থেকে নতুন করে টিকা এনে চাহিদা পূরণ করা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে কয়েকশ’ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যশোরে করোনার টিকাদান কার্যক্রম প্রথমে চালানো হচ্ছিল জেনারেল হাসপাতালের পশ্চিম গেটের পাশের একটি স্থাপনায়। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকা নিতে আসায় স্থান পরিবর্তন করে তুলনামূলক জায়গা বাড়িয়ে টিকাদানের বর্তমান কেন্দ্র নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার (এনটিসি) এলাকায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সেখানেও মানুষের এতো ভিড় হয় যে, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো সুযোগ ছিলনা উপস্থিত মানুষের মধ্যে। মানুষে মানুষ দূরত্ব কয়েক ইঞ্চির বেশি না। বেলা দুইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও এই সময়কালে তা সম্ভব হবে বলে নিশ্চিত নন কর্তব্যরত সেবিকারা। মানুষকে সামলাতে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবীদের হিমশিম খেতে দেখা যায়।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মিডিয়া ফোকাল পারসন ডা. রেহনেওয়াজ জানান, টিকা কেন্দ্রে যারা উপস্থিত হচ্ছেন তারা সবাই টিকা পাচ্ছেন। তবে আগ্রহীদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে।