পৃথিবী বাঁচাতে সন্তান জন্মদানে অনীহা ফরাসিদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বে মোট জনসংখ্যা বর্তমানে ৭৮০ কোটির বেশি। মানুষজনের ভোগবাদিতা বেড়ে যাওয়ায় নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। বিশেষ করে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে।
মানুষ কম থাকলে, এমন নেতিবাচক প্রভাবও কম থাকবে এবং পৃথিবীও সুস্থ হয়ে উঠবে- এমনটাই ভাবছে ফ্রান্সের বহু নাগরিক। আর এমন ভাবনা থেকেই সন্তান নেওয়ায় অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে তাদের মাঝে। এ লক্ষ্যে দেশটিতে ‘চাইল্ড ফ্রি’ নামক একটি ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সটুয়েন্টিফোর ডটকমকে ২৬ বছর বয়সী মেনন বলেন, ‘সন্তান গ্রহণ করা আমার আদর্শের বিরুদ্ধে যাওয়ার মতো একটি সিদ্ধান্ত। আমি কখনই সন্তান নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলাম না। আমি আমার চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্তের ওপর অটল থাকার মতো যৌক্তিক কারণ পেয়েছি। আমি বুঝে উঠতে পারিনা যে, কেন আমি একজন নতুন ভোক্তাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসবো যেখানে পৃথিবীর মোট ভোক্তার তুলনায় প্রাকৃতিক উপাদানের পরিমাণ সীমিত।’
মেনন আরো বলেন, ‘এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা বেশ কঠিন। তাদের মতে, চাকরি করা, বিয়ে করা এবং সন্তান থাকা হচ্ছে জীবনের মূল বিবেচ্য বিষয়। আমরা যখনি আমার মতামত তাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি তখনি মনে হয়েছে তারা বিষয়টি বুঝতে পারছেনা বা বুঝতে চাইছেনা। তাই আমরা পরিবারের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলাপ করা বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা বেশ ভাগ্যবান যে ফ্রান্সে নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে, যা বিশ্বের অন্যান্য নারী পান না। তাদের জন্য সন্তান নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের হাতে থাকেনা।’
ফ্রান্সে মেননের মতো বহু তরুণ-তরুণী পরিবেশের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সন্তান নেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখছেন। অনলাইনে তারা নিজেদেরকে ‘চাইল্ড ফ্রি’ বলে পরিচিতি দিচ্ছেন এবং কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরছেন।
২৭ বছর বয়সী ইউটিউবার ক্লিমেন্স বলেন, ‘সন্তান নেওয়ার বিষয়টি জীবনের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবা হয়। কিন্তু আমরা কি আদৌ নিজেকে কখনও প্রশ্ন করেছি যে, আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য কেমন পৃথিবী উপহার দিচ্ছি বা রেখে যাচ্ছি?’
ডেমোগ্রাফিক রেস্পন্সিবল নামক সংস্থার প্রেসিডেন্ট ডেনিশ গারনিয়ের বলেন, ‘আমরা গত ১২ বছর ধরে জন্মহার কমানোর ব্যাপারে প্রচারণা চালিয়ে আসছি। সন্তান না নেওয়ার বিষয়টি এখন ক্রমশই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ধন্যবাদ জানাই সেই সব সংবাদ সংস্থাকে যারা প্রতিনিয়ত জলবায়ু বিপর্যয় এবং জীববৈচিত্রের অস্তিত্ব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বে বর্তমানে ৭৮০ কোটির বেশি মানুষ রয়েছে এবং এটি সত্যি অনেক বেশি। ২০২২ কিংবা ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্ব জনসংখ্যা হয়তো ৮০০ কোটিতে পৌঁছে যেতে পারে।’
ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষক জিয়েন লুপ বেরটওক্সের মতে, ‘জনসংখ্যার আধিক্যতা অবশ্যই পরিবেশের বিরুপ আচরণের জন্য দায়ী। হিসাবটি সোজা, আমরা যত বেশি কার্বন উৎপন্ন করব, জলবায়ু তত বেশি খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাবে।’