চৌগাছায় করোনায় মৃত হিন্দু নারীকে সমাহিত করলো মুসলিমরা, আসেনি স্বজন কিংবা স্বজাতির কেউই

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় করোনায় জোসনা রানী (৭০) নামে এক হিন্দু নারী উপজেলা মডেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার ভোরে মৃত্যুর পর হাসপাতালের মেঝেতে মরদেহ পড়ে থাকলেও তা নিতে আসেননি তার স্বজন কিংবা স্বজাতির কেউই। এ খবর জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী এনামুল হক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অগ্রযাত্রা টিমকে খবর দেন। তারা ভ্যানে করে লাশটি পৌর শহরের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে পান্টিপাড়া শ্মশানে সমাহিত করেন। জোসনা রানী উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া গ্রামের ক্লাবপাড়ার মৃত সনতোষ কর্মকারের স্ত্রী। তিনি ৮ জুলাই সকালে করোনা নিয়ে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং গতকাল মারা যান।
অগ্রযাত্রা সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি হাজী হাসিবুর রহমান বলেন, আমরা করোনার সময়ে মানুষের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে জানান, হাসপাতালে করোনায় মৃত এক হিন্দু নারীর মরদেহ রয়েছে। দীর্ঘ সময় হাসপাতালের মেঝেতে মরদেহ পড়ে থাকলেও তা নিতে আসেননি তার স্বজন কিংবা স্বজাতির কেউই। ফলে আপনাদেরকে লাশটি সমাহিত করতে হবে। পরে আমরা ভ্যানে করে লাশটি পৌর শহরের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে পান্টিপাড়া শ্মশানে সমাহিত করেছি।
অগ্রযাত্রা সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ-সভাপতি করোনা যোদ্ধা আলমগীর হোসেন বলেন, জগত সংসারে কেউ কারো নয়, আজ আবার তা প্রমাণিত হলো। বৃদ্ধা হিন্দু মহিলা মারা যাওয়ার পর তার আত্মীয়-স্বজনরা মৃতদেহের পাশেই আসেননি। অনেকক্ষণ হাসপাতালের মেঝেতে পড়েছিল। আমরা কয়েকজন মুসলিম যুবক তাকে সমাহিত করেছি। তবে এ সময় বৃদ্ধার এক ছেলে উপস্থিত থাকলেও তিনি মায়ের মরদেহ ¯পর্শ করেননি। এগিয়ে যাননি আত্মীয়-স্বজন বা শ্মশান কর্তৃপক্ষও।
অগ্রযাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান প্রিয় বলেন, ‘খবর পেয়ে অগ্রযাত্রা সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি হাজী হাসিবুর রহমান, করোনা যোদ্ধা আলমগীর হোসেন আলমসহ আমাদের টিমের সদস্য আব্দুর রশিদ রাজু, ফয়সাল আহমেদ বৃদ্ধার লাশটি হাসপাতাল থেকে নামিয়ে ভ্যানযোগে শ্মশানে নিয়ে যাই। পরে সদস্যরা লাশের গোসল দিয়ে কাপড় পরিয়ে সমাহিত করি।
এ ব্যাপারে সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোতা মিয়া বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, ঘটনাটি দুঃখ জনক। হিন্দুরা কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে মায়ের মরদেহ বাড়িতে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন বৃদ্ধার ছেলেরা। করোনা রোগী হওয়ায় শ্মশান কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসেননি। তবে মুসলিম যুবকরা যারা এ কাজটি করেছেন তাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাই।