করোনায় মৃত্যু প্রফুল্ল সরকারকে শ্মশানে সৎকারে বাধা ॥ তাকওয়া’র দৃষ্টান্ত স্থাপন

0

মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের সাতনল গ্রামের মৃত রতন সরকারের ছেলে প্রফুল্ল সরকার। বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত আটটায় মৃত্যু হয় তার। করোনা ভাইরাস এখন মানুষের মধ্যে এতই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে প্রফুল্লের মৃত্যুর পর তার মরদেহ সৎকারের জন্য আত্মীয় স্বজন এমনকি এলাকার কোন ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি। হাসপাতাল থেকে তার মরদেহটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ত্রী ও সন্তানকে কেউ সাহায্যের হাত প্রসারিত করেনি। ফলে হাসপাতালের বারান্দায় মরদেহ নিয়ে যখন তারা দীর্ঘ প্রতিক্ষায় তখন খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মানবতার ডাকে সাড়া দেন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কয়েকজন সদস্য। তারা প্রফুল্লের মরদেহ নিয়ে পৌর শহরের তাহেরপুর মহাশ্মশানে সৎকার করেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, করোনায় মৃত্যু হওয়ায় প্রফুল্লের মরদেহ মহাশ্মশানে সৎকারে বাধা দেন শ্মশানের ঘোশাই (তত্ববধায়ক) সুশীল মন্ডল ও তার লোকজন। পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ও পৌর কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরীর হস্তক্ষেপে মরদেহটি সৎকার করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মুসলমান হয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের মৃতদেহ সৎকার করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সচেতনমহল।
সাতনল গ্রামে প্রফুল্ল সরকারের বাড়ি থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার। তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক প্রফুল্ল সরকার গোপালপুর বাজারে ব্যবসা করতেন। তিনি কয়েকদিন ধরে সর্দি-কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। পরে নমুনা পরীক্ষার পর তার শরীরে করোনা ধরা পড়ে। সেই থেকে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার ছোট ছেলে শেখর সরকার জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তার বাবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এ সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই মা মায়া সরকারকে সাথে নিয়ে শেখর তার বাবাকে একটি ভ্যানে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের ডা. ফারুক আযম জানান, এ সময় তাকে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাত আটটার দিকে প্রফুল্লের মৃত্যু হয়।
প্রফুল্ল সরকারের ছোট ছেলে শেখর সরকার জানান, তার বাবার মৃত্যুর পর মরদেহ সৎকারের জন্য আত্মীয় স্বজন অথবা এলাকার কোন ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি। এমনকি হাসপাতাল থেকে মরদেহটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদেরকে কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। ফলে হাসপাতালের বারান্দায় মরদেহ নিয়ে যখন তারা দীর্ঘ প্রতিক্ষায় ছিলেন। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কয়েকজন সদস্য গিয়ে প্রফুল্লের মরদেহ নিয়ে পৌর শহরের তাহেরপুর মহাশ্মশানে যান স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সৎকারের জন্য। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, করোনায় মৃত্যু হওয়ায় প্রফুল্লের মরদেহ তাহেরপুর মহাশ্মশানে সৎকারে বাধা দেন শ্মশানের ঘোশাই (তত্ববধায়ক) শুশীল মন্ডল ও তার লোকজন। প্রফুল্ল সরকারের ছেলে শেখর সরকার, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্য মাওলানা ইয়াসিন, আব্দুল্লাহ সোহান, আসাদুজ্জামান মিন্টুসহ প্রত্যক্ষদর্শী অন্যরা জানান, এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ও পৌর কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরীর হস্তক্ষেপে মরদেহ সৎকারের অনুমতি মেলে। তবে মৃতদেহ সৎকারে বাধা দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক তুলসি বসু জানান, মূলত করোনা আতঙ্কে অনাকাঙ্খিত এই ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপে মনিরামপুর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গে অন্তত দেড় শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।