চৌগাছাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পথে কপোতাক্ষ নদ খনন শুরু, উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছা উপজেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন অবশেষে পূরনের পথে। অবৈধ দখলদারদের কবল হতে উদ্ধার হচ্ছে কপোতাক্ষ, শুরু হয়েছে খনন কাজ। ২ বছরের মধ্যে ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন সম্পন্ন করা হবে। এদিকে নদ খননের খবরে উচ্ছ্বসিত এ জণপদের সর্বস্তরের মানুষ, তবে মাথায় হাত দখলদারদের। তারা নদের জমি আগলে রাখতে শুরু করেছে ব্যাপক দৌঁড়ঝাপ।
চৌগাছা উপজেলা সদরের বুক চিরে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গায় কপোতাক্ষের উৎপত্তিস্থল, এরপর আঁকা বাঁকা হয়ে চৌগাছা উপজেলাকে অঘোষিত ভাবে দু’ভাগে বিভক্ত করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা কপোতাক্ষ কালের পরিক্রমায় আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। কপোতাক্ষের করুণ পরিণতি নিয়ে একাধিকবার দৈনিক লোকসমাজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ পেয়েছে। অবশেষে সেই মরা কপোতাক্ষকে খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
নদ খননের খবরে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে এক ধরণের স্বস্তি ফিরে এসেছে, আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন কপোতাক্ষ পাড়ের জেলেরা। তবে অবৈধ দখলদাররা নদের জমি তাদের দখলে রাখতে শুরু করে দিয়েছে ব্যাপক দৌঁড়ঝাপ এমন অভিযোগ অনেকের। স্থানীয়দের দাবি নদ খেকোরা আর যেনো এটিকে গিলে খেতে না পারে সে দিকে সুদৃষ্টি দেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রিজ সংলগ্ন হতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন হবে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের মধ্যে খননকার্য শেষ করা হবে। নির্ধারিত পরিমাপে নদকে গভীর করা হবে আর খননকৃত নদের আড় হবে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। গত মাসের শেষ সপ্তাহে পৌরসভার হুদাচৌগাছা মহল্লার নিচ থেকে নদ খনন কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আপাতত খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে পুরোদমে খনন কাজ শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কপোতাক্ষ খননের খবর কিছুটা দেরিতে হলেও ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উপজেলাতে। এতে করে উচ্ছ্বসিত এ জনণদের মানুষ। তাদের মতে, নদে আবারও দেখা মিলবে অঢেল পানি, থাকবে দেশি মাছের সমারোহ, পখ-পাখালির কলরব আর চলবে পাল তোলা নৌকা। জেলেরা আবারও মাছ ধরে সংসার চালাবেন, নদে পানি থাকলে নদ পাড়ের পরিবেশে আসবে আমূল পরিবর্তন অনেকের হবে কর্মসংস্থান মনে করছেন স্থানীয়রা।
নদ পাড়ের বাসিন্দা উপজেলার হাজারাখানা গ্রামের জেলে পল্লীর হারান হালদার, জাবিন হালদার, মল্লিক হালদার, চিত্ত হালদার, পাঁচনামনা গ্রামের বিমল কুমার, চৌগাছার হালদার পাড়ার লক্ষন কুমার, পরিমল কুমার, সুকুমার হালদার, রবি হালদারসহ নদ পাড়ের জেলে পল্লীর একাধিক জেলে সদস্য জানান, কপোতাক্ষ এক সময় আমাদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ছিলো। সময়ের ব্যবধানে নদ হয়ে যায় মরা খাল। পানি না থাকায় মাছ শিকারও বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন। সম্প্রতি নদ খননের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাাতে আমরা খুবই আনন্দিত। আবারও নদে পানি থাকবে আমরা মাছ শিকার করতে পারব।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহি বাজার খলশি। বৃটিশ বণিকেরা বড় বড় জাহাজে করে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে কপোতাক্ষের বর্তমান খলশি বাজারের পাশে নোঙর করতো। জাহাজ থেকে মালামাল এই বাজারে পাশে খালাস করে রাখতেন। তাই কালে কালে ওই স্থানটির নাম খালাশি হতে খলশিতে রূপ নেয়। সেই খলশি বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইতিমুলদৌল্লাহ পান্নু বলেন, নদ খননের খবরে অন্যদের মত আমরাও আনন্দিত। নদে পানি না থাকায় এ অঞ্চলের টিউবওয়েলে খরা মৌসুমে পানি পাওয়া যায়না। খনন কাজ সম্পন্ন হলে কপোতাক্ষ তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, জানতে পেরেছি আমার ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রিজ সংলগ্ন হতে নদ খনন কাজ শুরু হবে। নদটি খনন করা সময়ের দাবি ছিল, দেরিতে হলেও খনন কাজ শুরু করায় বেশ ভাল লাগছে। নদটি যেখানে যেমন, সেখানে সেভাবে যেন খনন হয় এই প্রত্যাশা করছি। কোন ক্রমেই দখলদারদের জায়গা যেন নদ পাড়ে না হয় সেদিকেও সকলকে খেয়ার রাখতে হবে।
কপোতাক্ষ গেজেট পত্রিকার সম্পাদক ও প্রবীন সাংবাদিক এমে মুজাহিদ আলী বলেন, কপোতাক্ষ খননের জন্য আমি বিভিন্ন দফতরে অসংখ্যবার যাতায়াত করেছি। আজ কপোতাক্ষ খনন হচ্ছে জানতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। নদের দুই পাড়ের অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদকে উদ্ধার করে খনন কাজ চলবে বলে আমি আশা করছি।
চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নুর উদ্দিন আল মামুন হিমেল বলেন, এ জণপদের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল কপোতাক্ষ খনন করা, সেই কাজ আজ বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। নদ খননের পর অনেকেরই এই নদ হবে আয়ের উৎস। খনন কাজ সম্পন্ন হলে পৌর কর্তৃপক্ষ ব্রিজের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে নির্মাণাধীন পৌর পার্ক আরও দৃষ্টি নন্দন করে গড়ে তোলা হবে বলেও জানান।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, গত অর্থ বছরের শেষ সপ্তাহে আমরা কপোতাক্ষ খনন কাজ উদ্বোধন করেছি। এরপর বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কাজ বন্ধ আছে। আগামী খরা মৌসুমে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে। একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে ২ বছরের মধ্যে ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন সম্পন্ন করা হবে ।