বাঘারপাড়ায় মামলার তদন্তে ডিবি পুলিশ ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের তোপের মুখে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট আনোয়ার জাহিদ

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ গ্রাহকদের তোপের মুখে পড়েছিলেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত ব্যাংক এশিয়ার আটক এজেন্ট আনোয়ার জাহিদ। গতকাল শুক্রবার যশোরের ডিবি পুলিশ মামলা তদন্তে বাঘারপাড়া উপজেলার চতুরবাড়িয়ায় গেলে সাথে তাকে দেখতে পেয়ে তাদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটান। ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা তাকে নানা বাজে কথাও শুনিয়ে দেন। ডিবি পুলিশ এ সময় তদন্তে আটক এজেন্ট আনোয়ার জাহিদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় অর্ধলাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছেন।
দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই আরিফুল ইসলাম ও সঙ্গী এসআই মফিজুল ইসলাম ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ৩৪ জন গ্রাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে চতুরবাড়িয়া যান। এ খবর পেয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ সেখানে ছুটে আসেন। যার বেশিরভাগ ছিলেন নারী গ্রাহক। উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামের খলিলুর রহমান নামে একজন গ্রাহক জানান, তার কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন প্রতারক আনোয়ার জাহিদ। তারা তাকে খুবই বিশ্বাস করেছিলেন। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন আনোয়ার জাহিদ। অনুরূপ শারমিন খাতুনের ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, আসমা খাতুনের ২ লাখ টাকা, তাসলিমা খাতুনের (১) ৩ লাখ টাকা, তাসলিমা খাতুনের (২) ৫ লাখ টাকা, বিউটি খাতুনের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, মাছুরা বেগমের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মাকসুদা খানমের ৪৫ হাজার টাকা, নাছিমা বেগমের ১৭ হাজার ২শ’ টাকা, রিনা খাতুনের ৫০ হাজার টাকা, রেক্সোনা খাতুনের ২০ হাজার টাকা, সুফিয়া খাতুনের ৮২ হাজার টাকা, রূপালী খাতুনের ৩০ হাজার টাকা, বিজয় বিশ্বাসের ১২ লাখ টাকাসহ ক্ষতিগ্রস্ত অন্য গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন অভিযুক্ত আনোয়ার জাহিদ। ৩৪ জন ভুক্তভোগী গ্রাহক ডিবি পুলিশের কাছে এসে তাদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। অভিযুক্ত আনোয়ার জাহিদও উপস্থিত ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সামনেই ডিবি পুলিশকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের সত্যতাও স্বীকার করেন। এ সময় অভিযুক্ত আনোয়ার জাহিদ টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য বারবার গ্রাহকদের আশ্বাস দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিলেও গ্রাহকদের এশিয়া ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা দেননি আনোয়ার জাহিদ। যশোরের একটি প্রেস থেকে নকল আমানত জমাবই ছাপিয়ে এনে তা গ্রাহকদের দিতেন আনোয়ার জাহিদ এবং তাতে টাকা জমা দেয়া দেখানো হতো। গ্রাহকদের সামনেই জিজ্ঞাসাবাদে এর সত্যতা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত আনোয়ার জাহিদ। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অডিটের নাম করে ওইসব আমানত জমাবই নিজ হেফাজতে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। যা পরে তারা উদ্ধার করেছেন।
উপস্থিত লোকজন জানান, চতুরবাড়িয়া গ্রামের অনেক পুরুষেরা বিদেশে থাকেন। কেই মালয়েশিয়ায়, কেউ দুবাই আবার কেউ থাকেন সৌদি আরবে। তাদের পাঠানো কষ্টার্জিত টাকা স্ত্রীরা বিশ্বাস করে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা রাখতেন। কিন্তু এজেন্ট আনোয়ার জাহিদ নানাভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নারীদের কাছ থেকে নেয়া টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ জন্য তার কঠিন শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গ্রাহকদের পক্ষ থেকেও বাঘারপাড়া থানায় মামলা দায়ের হতে পারে।
উল্লেখ্য, ব্যাংক এশিয়ার চতুরবাড়িয়া এজেন্ট আনোয়ার জাহিদ ও তার ৩ সহযোগীসহ ৭ জনকে গ্রাহকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সম্প্রতি ডিবি পুলিশ আটক করে।