সৎ মাকে মৃত দেখিয়ে কোটি টাকার জমি দখল

0

বেনাপোল প্রতিনিধি॥কোটি টাকার সম্পদ থাকলেও অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন মরিয়ম বিবি নামে এক বিধবা নারী। ওয়ারিশ সনদের ফটোকপিতে জীবিত মরিয়ম বিবির নামের আগে ‘মৃত’ লিখে জালিয়াতি করে তার কোটি টাকার সম্পদ নিজেদের নামে করে নিয়েছেন স্বামীর অন্য স্ত্রীর সন্তানরা। সম্পদ ফিরে পেতে গত কয়েক বছর ধরে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এ বিধবা নারী।
জানা গেছে, স্বামী মারা যাওয়ার পর সৎ সন্তানরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর আশ্রয় নেন পরের বাড়িতে। মরিয়ম বিবি বেনাপোল পোর্ট থানার কাগজ পুকুর গ্রামের মৃত টেনাই মোড়লের স্ত্রী।
মরিয়ম বিবিকে আশ্রয় দেওয়া আব্দুল জলিল বলেন, টেনাই মোড়লের তিন স্ত্রী। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় দুই স্ত্রীর মৃত্যু হলে মরিয়ম বিবিকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে টেনাই মোড়লের মৃত্যু হয়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে চার ছেলেমেয়ে থাকলেও শেষের দুই স্ত্রীর ঘরে কোনও সন্তান ছিলো না। টেনাই মোড়লের মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা মরিয়ম বিবিকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে আমার বাড়িতে আশ্রয় নেন। টেনাই মোড়লের সন্তানরা ২০১২ সালে বেনাপোল পৌরসভা থেকে একটি ওয়ারিশ সনদ নেন। মূল ওয়ারিশ সনদ ফটোকপি করে মরিয়ম বিবির নামের আগে মৃত লিখে তা আবার ফটোকপি করেন। আর এই ওয়ারিশ সনদ নিয়ে তারা মরিয়ম বিবির সব সম্পদ তাদের নামে করে নেন।
জানা গেছে, বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ঘটনাটি জানতে পেরে মরিয়ম বিবি জীবিত রয়েছে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। সেটিসহ যাবতীয় তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে আদালতের আশ্রয় নেন তিনি। ২০১৯ সালে সব দলিল ও প্রমাণ দেখে আদালত মরিয়ম বিবির পক্ষে রায় দেন। আদালত মরিয়ম বিবিসহ টেনাই মোড়লের সব ওয়ারিশদের নামে জমি নামজারি করার জন্য সবাইকে নোটিশ পাঠান। তবে টেনাই মোড়লের তিন ছেলে আলী হোসেন, নুর হোসেন ও রবিউল আদালতের কোনও নির্দেশ না পাওয়ার কথা জানিয়ে পুনরায় আপিল করেন। এরপর দুই বছর পার হলেও এখনও এর কোনও সুরাহা হয়নি। একইসঙ্গে হুমকি-ধমকি দেওয়ায় ভয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন এ বৃদ্ধা। শুধু মরিয়ম বিবি নন, আইনি কাজে সহায়তা করায় প্রতিবেশী আব্দুল জলিলকেও নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মরিয়ম বিবি বলেন, আমার স্বামী টেনাই মোড়ল জীবিত থাকা অবস্থায় ভিটেবাড়ি থেকে আমার নামে ১০ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়। এখন প্রতিবেশী আব্দুল জলিলের জমিতে কুড়ে ঘর বেঁধে বাস করছি। ওয়ারিশ সূত্রে আমি সাড়ে ছয় বিঘার মতো জমি পাবো। যার বাজার মূল্য কোটি টাকার ওপরে। আমি অর্থাভাবে নিজের খাবারও জোগাড় করতে পারছি না। আদালতের খরচ বহন করাও আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না।
বেনাপোল পৌরসভার কাগজ পুকুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিরুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, টেনাই মোড়লের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১৬ একর। মৃত্যুর আগে তিনি তার তৃতীয় স্ত্রী মরিয়ম বিবির নামে ভিটে থেকে ১০ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। টেনাই মোড়লের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা বেনাপোল ভূমি অফিসের তৎকালীন নায়েব আব্দুল মজিদকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পৌরসভার দেওয়া ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করে জীবিত মরিয়ম বিবিকে মৃত দেখিয়ে সব জমি নিজেদের নামে নামজারি করে নেন। পরে সৎ মা মরিয়ম বিবিকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। মরিয়ম বিবি যে জীবিত আছে, এর প্রত্যয়নপত্র পৌরসভা থেকে দেওয়ার পর আদালতে মামলা করেন। মামলার রায় মরিয়ম বিবির নামে এলেও সন্তানরা তার জমি বুঝিয়ে না দিয়ে আদালতে আবার আপিল করেছেন।