পশু বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তা

0

ঈদুল আজহা সামনে রেখে এবারো দেশে গরু, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি গৃহপালিত পশু বিক্রেতা বা খামারিদের দুর্ভাবনার অবধি নেই। বিদ্যমান ‘কোভিড-১৯’ মহামারী পরিস্থিতিতে এবং এর সাথে বর্ষার বৃষ্টির দরুন ক্রেতার প্রতীক্ষায় থাকা পশুখামার মালিকদের উদ্বেগের অবসান ঘটছে না। লাখ লাখ টাকা তারা জোগাড় করে বিনিয়োগ করেছেন পশুর খামারের পেছনে। পশু মোটাতাজাকরণ, এদের রোগবালাই দূর করা, খামার ব্যবস্থাপনাসহ নানাভাবে প্রত্যেক দিন তাদের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব, এর সংক্রমণ ও রোগীদের মৃত্যু, সংশ্লিষ্ট আর্থিক দুর্ভোগ ইত্যাদি বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে। সরকার এই মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গ ঠেকাতে কড়াকড়ির সাথে লকডাউন জারি করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে বর্তমানে জনজীবন অনেকটা স্থবির। এর সাথে ঝড়ো হাওয়া, বর্ষা ও বন্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব মিলিয়ে পশু খামারিরা নিদারুণ দুশ্চিন্তায়।
ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে, গরু ও ছাগল পালনে নিয়োজিত খামারি কৃষকদের উৎকণ্ঠা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরো জানানো হয়েছে বিশেষত ভারতের সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়া জেলার পরিস্থিতি। এ জেলা ভাইরাসজনিত মহামারী কোভিডের দিক থেকে অনেক জেলার চেয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর বেলায় এগিয়ে। করোনা রোগের আতঙ্কে কুষ্টিয়া অঞ্চলে অন্য স্থানের মানুষ আসছে না। মহামারীর প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যু ক্রমবর্ধমান। এর মধ্যে চলছে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন। এই প্রেক্ষাপটে পশুর বিক্রেতাদের দুর্ভোগ ও উদ্বেগের শেষ নেই। অন্যান্য বছর রোজার ঈদের পরই কোরবানির পশু কেনা শুরু হয়ে যায়। অথচ এবার আজো তা শুরু হয়নি প্রধানত মহামারীর ভয়ে। কুষ্টিয়া জেলাতে ৯০ হাজার গরু ও ছাগল কোরবানির জন্য তৈরি বলে জানানো হয়েছে। অবশ্য বেসরকারি সূত্র মতে, এ সংখ্যা অন্তত এর দ্বিগুণ। প্রতিবার দেখা গেছে, দেশের নানা স্থানের ব্যবসায়ীরা কুষ্টিয়ায় এসেছেন রোজার পরপরই কোরবানির পশু কেনার জন্য। ফলে খামার ও চাষির বাড়ি থেকেই এসব পশুর বেশির ভাগ বেচা সম্ভব হতো। তবে এবার উল্টো চিত্র বিরাজমান । লকডাউনে সড়ক ও রেলপথের দিক দিয়ে কুষ্টিয়া এখন বিচ্ছিন্ন। এতে অন্যত্র থেকে বেপারীরা আসতে পারছেন না। তদুপরি, স্থানীয় পশুহাট সবগুলোই বন্ধ রয়েছে লকডাউনের কারণে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার জানান, এ জেলায় আছে ৬০ হাজার গরু এবং তার অর্ধেক ছাগল। পশুর হাট চালু না হলে এবারকার পশু বাজার সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, তাই হাটে না গিয়ে অনলাইনে পশু বিক্রি করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের অফিসগুলো এ জন্য জনগণকে সহায়তা প্রদান করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় চাহিদা বেশি দেশী ও ছোট গরুর। বিক্রেতারা এবার পশুর ভালো দাম আশা করছেন। অনেকের অভিমত, কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে গরু বোঝাই ট্রাকের চলাচলের পথ সুগম করে দেবে। একজন খামারির কথা : ‘কোরবানির গরু বেচতে প্রতিবার চট্টগ্রামে যাই। এবারো অর্ধশত গরু নিয়ে তৈরি হয়েছি। তবে শঙ্কা হলো, মহামারী নিয়ে।’ এক কৃষক উদ্বেগের সাথে বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী দু’টি গরুর পেছনে অনেক খরচ করে ফেলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে?’ নানা শঙ্কা সত্ত্বেও খামারিসহ কৃষকদের প্রত্যাশা, ঈদের আগেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তাই তারা চাটগাঁ-সিলেটে গরু বিক্রির প্রস্তুতি সারছেন।
আমরাও আশা করছি, ঈদের পশুর হাট দেশে এবার জমে উঠবে। এ জন্য প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা জরুরি।