শ্মশানে স্বামীর লাশের পাশে রাত কাটলো স্ত্রীর

0

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি॥ স্বামীর লাশ নিয়ে পুরো রাত শ্মশানে কাটিয়েছেন কল্পনা রানী কর্মকার নামে এক বৃদ্ধাস্বামীর লাশ নিয়ে পুরো রাত শ্মশানে কাটিয়েছেন কল্পনা রানী কর্মকার নামে এক বৃদ্ধা
কুষ্টিয়ার মিরপুরে করোনায় মারা যাওয়া স্বামীর লাশ নিয়ে পুরো রাত শ্মশানে কাটিয়েছেন কল্পনা রানী কর্মকার নামে এক বৃদ্ধা। লাশ সৎকারে শ্মশান কমিটি কিংবা আত্মীয়-স্বজন কেউ এগিয়ে আসেননি। রবিবার (৪ জুলাই) দুপুরে সুলতানপুর গ্রামের কয়েকজন মুসলিম যুবকের সহায়তায় শ্মশানের পাশে লাশ সমাহিত করা হয়। মিরপুর উপজেলার পৌর শ্মশানের ঘটনা এটি।
স্থানীয়রা জানায়, শনিবার (০৩ জুলাই) রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিতলা এলাকার প্রফুল্ল কর্মকারের (৭০) মৃত্যু হয়। রাতেই অ্যাম্বুলেন্সযোগে মিরপুর পৌর শ্মশানে তার লাশ নিয়ে যান স্ত্রী কল্পনা কর্মকার। মৃত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় শ্মশানে আসেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। লাশ সৎকারে অনীহা প্রকাশ করেন স্বজনরাও।
কল্পনা রানী কর্মকার জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্স লাশ নিয়ে যখন শ্মশানে পৌঁছায় তখন মধ্যরাত। শ্মশান কমিটির সদস্যদের বিষয়টি জানালে শ্মশানের গেটের চাবি দিলেও আসেননি কেউ। লাশ নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ফেরত যায়। এরই মধ্যে শুরু হয় বৃষ্টি। পরে লাশ শ্মশানের পাশে রেখে গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নেন কল্পনা। সেখানে একাই রাত পার করে দেন। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষার পরও লাশ সৎকারে আত্মীয়-স্বজন কিংবা শ্মশান কমিটির কেউ আসেননি।
স্থানীয় কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রফুল্ল কর্মকারের দুই ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি করোনায় আক্রান্ত। তাই শ্মশানে আসতে পারেননি তারা। পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়েরও কেউ লাশ সৎকারে এগিয়ে আসেননি। সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি জানালে স্থানীয় মুসলিম যুবকদের সহায়তায় শ্মশানের পাশে লাশ সমাহিত করা হয়।
কাউন্সিলর আরও বলেন, প্রফুল্ল কর্মকার এক সপ্তাহ ধরে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
শ্মশান কমিটির সভাপতি আনন্দ দেবনাথ বলেন, শনিবার রাত ২টার দিকে প্রফুল্ল কর্মকারের বড় ছেলে আনন্দ কুমার তার বাবার মৃৃত্যুর সংবাদ দেয়। পরে আমি শ্মশানের চাবি দিই। কিন্তু লাশ সৎকারের জন্য আমাদের সহযোগিতা চাননি পরিবারের সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্মের কেউ মারা গেলে ওই গোত্রের লোকদের জানানোর নিয়ম রয়েছে। এখানে সেই নিয়ম মানা হয়নি। এমনকি লাশ সমাহিত করার সময় তার সন্তানরাও ছিল না।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি জানার পর পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছি। তারা স্থানীয় মুসলিম যুবকদের নিয়ে লাশ সমাহিত করেছেন।