করোনা টিকার জন্য প্রবাসীদের পদে পদে ভোগান্তি, যা বলছেন মন্ত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিদেশে যাওয়ার টিকিট পাওয়ার জন্য রাত জেগে বসে থাকতে হয়, টিকার দাবিতে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে মিছিল করতে হয়।গত বছরের শেষ দিকে ছুটিতে কুয়েত থেকে দেশে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কামাল হোসেন। তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে আকামাও বাতিল হয়েছে। এক বছরের জন্য নতুন আকামা নিয়েছেন সেটিও শেষ হওয়ার পথে। এখন ফাইজারের টিকা নিতে না পারলে যেতে পারবেন না তিনি দেশটিতে। এই টিকার জন্যই হণ্যে হয়ে ঘুরছেন তিনি। লকডাউনের বাধা ঠেলে বাঞ্ছারামপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসেছেন। কিন্তু নানা জটিলতায় টিকার জন্য নিবন্ধনই তিনি করতে পারেননি।
যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটিতে দেশে এসেছেন তাদের অনেকেরই ফেরার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। টিকা নিতে না পারার কারণে যেতে পারছেন না কর্মস্থলে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কুয়েত প্রবাসীরা। দেশটি যে চারটি টিকার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশে শুধু ফাইজারের টিকা রয়েছে। ফলে এখন টিকাটি পেতে উদ্বিগ্ন সময় কাটাচ্ছেন তারা।
কুয়েত সরকার জানিয়েছে, যাদের ফাইজারের টিকা নেয়া থাকবে তাদের দেশটিতে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না, সরাসরি কাজে যোগ দিতে পারবে। এরপর থেকেই ফাইজারের টিকা পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন বাংলাদেশে থাকা কুয়েত প্রবাসীরা।
বৃহস্পতিবার থেকে ফাইজারের টিকা পেতে আগ্রহী প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। এখানেও ভোগান্তি। এক্ষেত্রে আগে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। এরপর সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিএমইটি থেকে নিবন্ধন পেতেই হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা।
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘যাদের পাঠানো অর্থে আমাদের রিজার্ভ সমৃদ্ধ হচ্ছে তাদের প্রতি আমাদের ন্যূনতম মমত্ববোধ নেই। কোনোকিছুতেই তাদের অগ্রাধিকার নেই। বাংলাদেশের সব নাগরিক শুধু সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেই টিকা নিতে পারছেন। অথচ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দুইবার রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। কেন এটা হবে? সুরক্ষা অ্যাপে ব্যবস্থা করলেই তো হয়?’
হাসান বলেন, ‘টিকা না নিলে বিদেশে যাওয়া যাবে না। এটা অনেক আগেই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু এর জন্য কারো প্রস্তুতি ছিল না।’
‘এপ্রিলে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ফাইজারসহ নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের টিকা না নেয়া থাকলে টাকা খরচ করে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এক পর্যায়ে তাদের টিকার অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হলো। কিন্তু জেলা হাসপাতালগুলো থেকে প্রবাসীদের ফিরিয়ে দেয়া হলো। তারা কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় এলেন। এরপর বলা হলো, ১ জুলাই থেকে সাত হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। এরপর বলা হলো, রেজিস্ট্রেশন করে আসতে হবে। এভাবে কেন বারবার তাদের দুর্ভোগে ফেলা হচ্ছে?’ প্রশ্ন তার।
তবে শ্রমিকদের দুর্ভোগের কথা মানতে রাজি নন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহিদুল আলম। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ কারণেই তো তাদের টিকা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন বিএমইটি থেকে তারা রেজিস্ট্রেশন না করলে কিভাবে বোঝা যাবে তারা শ্রমিক। তাদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা। ভাগ না থাকলে রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করলে তারা তো টিকাই পাবে না। আমরা তো ফাইজারের টিকা বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্যই বরাদ্দ রেখেছি।’
জানা গেছে, বিদেশগামীদের টিকার নিবন্ধন শুরু হয় শুক্রবার সকালে। তবে অ্যাপে নিবন্ধন করতে না পেরে তারা ভিড় করেন ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে। সার্ভার জটিলতায় শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন ছাড়াই ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে। শুক্রবার যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি তারা বিক্ষোভ করেছেন ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সামনে। লকডাউনে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ, তারপরও ঢাকার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কর্মীরা এসেছিলেন নিবন্ধন করতে। সার্ভার জটিলতায় নিবন্ধন করতে না পেরে বিক্ষোভ করে তারা ফিরে গেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বাস নিয়ে।