মনিরামপুরে সম্পত্তির লোভে মাকে মারপিট, চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা

0

মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে সম্পত্তির লোভে গর্ভধারিণী মাকে মারপিটের পর দুই চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন আপন ছেলে মেহেদী হাসান টিটো। বৃহস্পতিবার রাতে গোপালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাকে উদ্ধারের পর প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন পাষ- ছেলে।
একাধিক সূত্র জানায়, মনিরামপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আবদুল খালেক দফাদার কয়েক বছর আগে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান। মারা যাবার সময় তিনি রেখে যান স্ত্রীর নামে পাকাবাড়িসহ বেশ কয়েক বিঘা সম্পত্তি ও অর্থ। এর মধ্যে মেঝ ছেলে তানভিরুল ইসলাম টুটুল পর্তুগালে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে দুই ছেলে ও মেয়ের বিয়ে হয়। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদল একটি সমবায় সমিতির পরিচালক। ছোট ছেলে মেহেদী হাসান টিটো ব্যবসায়ী। তারা দুই ভাই পৃথকভাবে বসবাস করেন। মা হসিনা খাতুন ইতিমধ্যে ছেলে মেয়েদের মাঝে অধিকাংশ সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা করে দিয়েছেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে মায়ের নামে বসতবাড়িসহ কিছু সম্পত্তি থাকা নিয়ে।
খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী জানান, ছোট ছেলে মেহেদী হাসান টিটো বসতবাড়ির সব জমি দাবি করেন মায়ের কাছে। কিন্তু মা টিটোকে আট শতক জমি দিতে রাজি হন। মূলত এ নিয়েই টিটো তার মায়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ ঘটনায় ইতিপূর্বে টিটো তার মাকে কয়েকবার মারপিট করেন এবং হত্যারও হুমকি দেন। ফলে উপায়ান্ত না পেয়ে টিটোর বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে মোট তিনটি মামলা করেন মা হাসিনা খাতুন। এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েকদফা শালিসও হয়েছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে বাড়িতে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে টিটো মায়ের ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট করেন। টিটো এসময় আঙ্গুল ঢুকিয়ে তার মায়ের দুই চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এতে মা রক্তাক্ত জখম হন। মায়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে তিনি পালিয়ে যান। স্থানীয়রা হাসিনা খাতুনকে উদ্ধারের পর প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই রাতেই তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
টিটোর বড় মামা মাসুদুর রহমান জানান, ‘ইতিপূর্বে বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদলও তার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। তবে ছোট ছেলে এ নিয়ে কয়েকদফায় তার মাকে মারপিট করলো। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’ বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদল জানান, টিটোর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ধিক্কার দিয়ে জানান, এ ঘটনায় টিটোকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
মনিরামপুর থানা পুলিশের ওসি (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এখনও কেউ মামলা করেননি। মামলা করলে কুলাঙ্গার ছেলেকে গ্রেফতারপূর্বক কঠোর শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে।