অসুস্থ মাকে নিয়ে ৯ ঘণ্টায় ৬ হাসপাতালে ঘুরলো ছেলে

0

হেদায়েত হোসাইন, খুলনা॥অসুস্থ মাকে নিয়ে নয় ঘণ্টায় ছয় হাসপাতাল ঘুরেছেন এক ছেলে। বেসরকারি হাসপাতালে করোনা শনাক্তের পর সরকারি হাসপাতালে যান। ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতালে শয্যার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে কেটে যায় দুই ঘণ্টা। পরে অক্সিজেন সংকটের কথা বলে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এভাবে ছয় হাসপাতালে ঘুরতে কেটে যায় নয় ঘণ্টা।
এমন অভিযোগ করেছেন খুলনা মহানগরীর খালিশপুর নয়াবাটি এলাকার বাসিন্দা জুলেখা বেগমের (৬৫) ছেলে মো. লিটন। তিনি বলেন, ছয় হাসপাতালে দৌড়ে হলেও মাকে বাঁচাতে পারলাম; সেজন্য শুকরিয়া।
লিটনের মতো একই অবস্থায় পড়তে হয় খুলনায় শ্বাসকষ্ট ও করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের। রোগী নিয়ে একাধিক হাসপাতালে ছুটলেও মিলছে না শয্যা। অনেক রোগী পান না চিকিৎসা ও অক্সিজেন। এজন্য অধিকাংশ রোগী বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেন।
তবে রোগীদের এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, হাসপাতালে শয্যার সংকট আছে। কিন্তু অক্সিজেনের সংকট নেই। সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি আমরা।
মো. লিটন বলেন, মায়ের জ্বর, সর্দি-কাশি ছিল না। রবিবার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিয়ে যাই ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। শ্বাসকষ্ট থাকায় ভর্তি নেয়নি তারা। পরে সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখান থেকেও ফেরত পাঠানো হয়। এরপর গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানেও ভর্তি নেয়নি। সেখান থেকে ফরটিস এসকট হাসপাতালে পৌঁছাই ভোর ৬টায়। এই হাসপাতালে তিন ঘণ্টায় বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। এখানে মায়ের নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা শনাক্ত হয়। পরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মো. লিটন আরও বলেন, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শয্যা না পেয়ে মাকে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অক্সিজেন দিয়ে শুইয়ে রাখা হয়। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় মাকে অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়। এরপর হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ বলে অক্সিজেন নেই, তাকে দ্রুত খুলনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সদর হাসপাতালে মাকে নিয়ে এলে ভর্তি করানো হয়।
একই অভিযোগ করেছেন মহানগরীর পূর্ববানিয়া খামার চৌধুরী গলির বাসিন্দা মহিদুল হক শান্ত। তিনি বলেন, চৌধুরী গলির বাসিন্দা মাহমুদুল হক রুবেল আমার আত্মীয়। এক সপ্তাহ ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছে। বাসায় অক্সিজেনের মাধ্যমে শ্বাস নিচ্ছিল। সোমবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাকে নেওয়া হয় খুলনা সদর হাসপাতালে। কিন্তু করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট না থাকায় তাকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে আরেক হাসপাতালে নিলে ফেরত পাঠানো হয়। নিরুপায় হয়ে তাকে মহানগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, রোগীর স্বজনদের কিছু অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের এখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের এখন পর্যন্ত ঘাটতি নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে শয্যা নেই। এজন্য সব রোগীকে ভর্তি রাখা যায় না। সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি। এরপরও নানা সমস্যায় রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে শুধুমাত্র করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি রাখা হয়। শ্বাসকষ্ট কিংবা করোনার উপসর্গ দেখা দিলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত থাকলেও শয্যার সংকট আছে।
এদিকে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন করোনা পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা করোনা হাসপাতালে সাতজন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একজন ও বেসরকারি গাজী মেডিক্যাল হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে রেড জোনে ৯৮ জন, ইয়োলো জোনে ১৩ জন, ডিএইচইউতে ১৮ জন ও আইসিইউতে ২০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ভর্তি হয়েছেন ২২ জন ও ছাড়পত্র নিয়েছেন ৩৪ জন।