প্লাস্টিক খাতের করপোরেট কর ১০ শতাংশ করার দাবি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্লাস্টিক খাতের কোম্পানির করপোরেট কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পাশাপাশি রফতানি খাতের সমহারে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
সোমবার (৭ জুন) ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি সামিম আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘কোভিড মহামারি মোকাবিলায় প্লাস্টিক সেক্টর নিরলসভাবে কাজ করেছে এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ফেসমাস্ক, ফেস সিল্ড, গগলস, হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার, পিপিই, জীবাণুনাশক ওষুধের বোতল, বিভিন্ন ওষুধের প্যাকেজিংয়ের জন্য প্লাস্টিক ব্যাপকভাবে প্রয়োজন হয়। আমাদের শিল্পগুলো দিনরাত উৎপাদন করে সরকারের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখছে।’
বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে সারাদেশে প্লাস্টিকের প্রায় ৫ হাজার ৩০টির বেশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণভাবে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দিয়ে থাকে। রফতানি হয় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। প্লাস্টিক সেক্টরে ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।’
এ সময় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে প্লাস্টিক খাতের জন্য বেশি কিছু দাবি তুলে ধরেন সামিম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রফতানি খাতে উৎসে কর এবং করপোরেট কর হার খাত ভেদে বিভিন্ন হারে ধার্য করা আছে। সকল রফতানি খাতে সমহারে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ এবং করপোরেট কর হার সমতায়ন করে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ ধার্য করার প্রস্তাব করছি। এতে রফতানি বাণিজ্যে আগ্রগতি হবে। নতুন বিনিয়োগ ও কর্মংস্থান বৃদ্ধি পাবে।’
এ সময় দেশীয় উৎপাদিত প্লাস্টিক খেলনা সামগ্রীর ওপর আরোপ করা ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার দাবি জানান বিপিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘খেলনা শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে। তাই শিশুদের কথা চিন্তা করে হলেও খেলানার ওপর আরোপ করা ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, দেশীয় খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র। এদের ভ্যাট দেয়ার সক্ষমতা নেই। ভ্যাটের খাতাপত্র মেইনটেইন করার সামর্থ্য নেই। ১৫ শতাংশ ভ্যাটের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় বিদেশি নিম্নমানের পণ্য বাজারে আসছে।
এ সময় প্লাস্টিক খাতের জন্য আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন বিপিজিএমইএ সভাপতি। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে-
>>> ক্রোকারিজ (প্লাস্টিকের তৈজসপত্র) আইটেমের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা।
>>> ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, তৈরি পোষাক খাতসহ অন্যান্য শিল্পখাতের সঙ্গে প্লাস্টিক খাতেও কর অবকাশ সুবিধা সম্প্রসারণ করা।
>>> বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, বিটিটিএলএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা সংক্রান্ত এসআরও জারি করা।
>>> অ্যালু, অ্যালু বটম ফয়েল ও অ্যালুমিনিয়াম ব্লিস্টার ফয়েলের বর্তমান শুল্ক হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা।
>>> ব্যবসায়ীদের ওপর টার্নওভার ভিত্তিক ধার্য করা আয়কর দশমিক ২৫ শতাংশ চূড়ান্ত আয়করের হিসাবে সমন্বয়ন করা।
>>> ৩ শতংশ আগাম কর অব্যাহতি দেয়া।
>>> টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করে কর হার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা।
>>> স্প্রে ডেড, ডিসপেনার হেড প্লাস্টিক, মিস্ট স্প্রেয়ার, স্প্রে গান, ট্রিগার স্প্রে, হ্যান্ড পাম্প প্লাস্টিক, অ্যাগ্রিকালচার স্প্রে প্লাস্টিক, স্প্রেড হেড প্লাস্টিক, ডিস্পেন্সার পাম্প প্লাস্টিক, পাম্প ফর শ্যাম্পু অ্যান্ড আদারস প্লাস্টিক, বোতল স্প্রে হেড প্লাস্টিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য শুল্ক ঠিক রেখে এসডি ৫০ শতাংশ করা। সেই সঙ্গে ট্যারিফ ভ্যালু প্রতিকেজি কমপক্ষে ১২ ডলার করা।
>>> আধুনিক শহর ও জনজীবনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত প্রয়োজন এবং বাজেটে তার প্রতিফলন থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, কে এম ইকবাল হোসেন, কাজী আনোয়ারুল হক, পরিচালক মোসাদ্দেকুর রহমান নান্নু, মো. শাহজাহান, এটিএম সাঈদুর রহমান বুলবুল, মো. এনামুল হক, আমান উল্লাহ, সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন ও ফেরদৌস ওয়াহেদ।