নেতৃত্ব থেকে আব্বাসকে অপসারণের দাবি ফিলিস্তিনিদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পশ্চিম ও পূর্বের সকলেই ফিলিস্তিনি জনগণের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বসবাসের অধিকারের পক্ষে ধারাবাহিকভাবেই বলে আসছেন। ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার ৬০ ভাগের বেশি তরুণ। তাদেরও অধিকার রয়েছে নীতি নির্ধারণে অক্ষমতা ও রাজনৈতিকভাবে কম সচেতন বয়স্কদের সরিয়ে তরুণ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনার। সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহে বর্তমান নেতৃত্বের প্রভাব প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর তুলনায় নিতান্তই কম। ফিলিস্তিনি জনগণ বিরক্ত। এক বয়োবৃদ্ধ প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের কাছে তাদের সক্ষমতাকে আবদ্ধ রাখতে প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। যেই প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনিদের ভূমি একের পর এক দখলের মুখে ধারাবাহিকভাবে ইসরাইলি দখলদার কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতার করে যাচ্ছেন। সাফল্যের মিথ্যা দাবির মুখে চুপ থাকতে অস্বীকার করছে জনগণ। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে নিজেদের স্বদেশ চুরি হতে দেখে তারা চুপ থাকবে না। পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় জনগণ ধৈর্য ধারণ করে এসেছে। এখন সময় হয়েছে তাদের হাতে থাকা সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, জনপ্রিয়গত, প্রতিষ্ঠানগত ও পরিবারিক উপকরণের মাধ্যমে পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও), ফাতাহ এবং বিশেষভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষসহ (পিএ) সবধরনের নেতৃত্বের আসন থেকে মাহমুদ আব্বাসের অপসারণের ডাক দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার পথে নেতৃত্বের বাছাই করে নিতে, দখলদারিত্বের অবসানে এবং ফিলিস্তিনের ইতিহাস, প্রতিরোধ সংগ্রাম, জনগণ, ভবিষ্যৎ ও নিয়তির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা দালালদের অপসারনে জনগণের সিদ্ধান্তের সুযোগ দেয়া আবশ্যিক। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এই লক্ষ্যে এক পিটিশন স্বাক্ষর করেছেন, যাতে স্পষ্ট হয়েছে জনগণের মতামত। পিটিশনের বক্তব্যে বলা হয়:
‘আমরা, নিম্নস্বাক্ষরকারী ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও জন পরিচিত ব্যক্তিরা, সক্রিয় লড়াইরত বাহিনীসমূহসহ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি এই পিটিশনের মাধ্যমে আমরা প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বৈধতা কেড়ে নেয়ার এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ও ফাতাহ আন্দোলনের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে তার পদত্যাগ বা শিগগির পদচ্যুতির দাবি জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা তাদের আহ্বান জানাচ্ছি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে পুনর্নির্মাণ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বিকল্প নেতৃত্ব বাছাই করে নিতে নির্বাচনে জাতীয় প্রচারণায় সমর্থন দেয়ার জন্য। সাম্প্রতিক গৌরবময় জেরুসালেম ইন্তেফাদায় প্রেসিডেন্ট ও তার নীতি নির্ধারণ, কর্তৃত্বের সুস্পষ্ট দুর্বলতা প্রকাশ করে হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণ এতে যথেষ্ট ভুগেছে। শেখ জাররাহ মহল্লায় সূচনা থেকে এবং মসজিদুল আকসাসহ জেরুসালেমের পরে গাজা, পশ্চিম তীর, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও অভিবাসীদের মধ্যে ইন্তেফাদা ছড়িয়ে পড়ার পর তাতে প্রধানতম অনুপস্থিত ব্যক্তি ছিলেন প্রেসিডেন্ট। আব্বাস তার রাজনৈতিক রেকর্ডে অপর একটি ব্যর্থতা যোগ করেছেন, যা প্রমাণ করছে ফিলিস্তিনি জনগণের সামগ্রিক দুর্ভোগে নূন্যতম পর্যায়েও তার নৈতিক সমর্থনের অনুপস্থিতি। গাজা ও পশ্চিম তীরের শহীদদের পরিবারের সাথে সাক্ষাত করতে যাওয়ার কষ্ট স্বীকার করেননি বা মতপার্থক্যের সমাপ্তির সূচনায় সুযোগ নেননি। এর বদলে জেরুসালেম ইন্তেফাদা প্রেসিডেন্ট নিজেকে যে অসাড় অবস্থায় রেখেছেন, তা প্রকাশ করে দিয়েছে। এমনকি পিএলও, এর নেতৃত্ব এব ফিলিস্তিনি জনগণের মাঝে এর প্রতিনিধিত্বসহ ফাতাহর মতো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অধিকারী দীর্ঘদিনের জাতীয় আন্দোলন যদি ধ্বংস না হয়, তাকে অচল করে রেখেছেন। যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে জেরুসালেম ইন্তেফাদায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুপস্থিতি। আব্বাসকে পদচ্যুত করার আহ্বান গত তিন দশকে তার কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে করা হয়েছে, যাতে ‘শান্তি প্রক্রিয়ার’ পথে মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয়নি। প্যালেস্টেনিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল, প্যালেস্টেনিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা প্যালেস্টেনিয়ান সেন্ট্রাল কাউন্সিলের মতো বাস্তব কার্যকর জাতীয় প্রতিষ্ঠানের অভাবে রাজনৈতিক ব্যর্থতায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছে না। জাতির সকলের জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব হয়ে পড়েছে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ব্যর্থতার প্রতিকারে তাদের আওয়াজ তোলার।’
পিটিশনে মাহমুদ আব্বাসের অপরাধের সার-সংক্ষেপ নিম্নের পয়েন্ট আকারে আলোচনা হয় :
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিন দশকের চূড়ান্ত ব্যর্থতা, নিজের সাথেই ফিলিস্তিন ইস্যুর সমাপ্তি এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিলোপ
প্রতিরোধ ও জাগরণের প্রতি তার ধারাবাহিক শত্রুতার ঘোষণা
সর্বশেষ জেরুসালেম ইন্তেফাদায় তার লজ্জাজনক অনুপস্থিতি
ফাতাহ আন্দোলনকে কুক্ষিগত ও স্তব্ধ করা এবং সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর কার্যকারিতা অচল করা
পিএলওকে কুক্ষিগত করা এবং ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামে ও প্রতিনিধিত্বে একে সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রাখা, সাথে সাথে এর সংস্কারে সর্বস্তরের লোকের আহ্বান না শোনা
অন্তর্বর্তীকালীন অসলো প্রক্রিয়া ও এর বিপজ্জনক জুয়াকে স্থায়ী অবস্থায় পরিবর্তন করে নেয়া, যা জায়নবাদী দখলদারিত্বের নিরাপত্তা সহায়তা দেয়ার ওপর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে এক ব্যক্তির অধীন একনায়কতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, প্রেসিডেন্টের আদেশের ছদ্মবেশে কোনো প্রকার পর্যালোচনা বা দায়বদ্ধতা ছাড়াই আব্বাসের নিজস্ব মত অনুসারে আইন প্রণয়ন
গত মাসে নির্ধারিত ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনকে বাতিল করা এবং এর মাধ্যমে কোনো প্রকার নির্বাচনী বা সামরিক বৈধতার অনুপস্থিতিকে প্রতিষ্ঠিত করা
একই রকম ফলাফলহীন কাজ বারবার ধারাবাহিকভাবে করে যাওয়া এবং জনগণের মতামত বা নিজের উপদেষ্টাদের কথা না শুনে আপসের পথে তার তিন দশকের উন্মাদ প্রতিজ্ঞায় অটুট থাকা
মার্কিন সহায়তার কাছে তার আত্মসমর্পণ যা ইসরাইল ও তার জায়নবাদী প্রকল্পের সাথেই সংশ্লিষ্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সৎ’ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মেনে নেয়া
ফিলিস্তিনি জনগণের নেতৃত্বের পর্যায়ে থেকে তার সামর্থ্যে থাকা সক্ষমতায় মতবিরোধ দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে তার ব্যর্থতা
ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রকল্পে তার অবহেলা
পিটিশনের উপসংহারে স্বাক্ষরকারীরা বলেন:
‘আমরা ঘোষণা করছি এই প্রেসিডেন্টের আর কোনো রাজনৈতিক বা জাতীয় বৈধতা নেই এবং তার উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করার অথবা তার দখলে থাকা তিন নেতৃত্বের অবস্থান থেকে তাকে অপসারন করার। আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি এই ডাকে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং সংগ্রামের একতা, জনগণের একতা ও ভূমির একতার ভিত্তিতে নতুন এক পৃষ্ঠা উল্টানোর এবং এক ঐক্যবদ্ধ ও সকলের প্রতিনিধিত্বমূলক পিএলও পুনর্নির্মাণের সূচনা করার। আমরা আরো আহ্বান জানাচ্ছি পুরো অধিকৃত ভূমিতে জনতার প্রতিরোধ শুরু করার। ফিলিস্তিনি জনগণের এমন একজন প্রেসিডেন্টের সাথে সময় নষ্টের বিলাসিতায় থাকার সুযোগ নেই যখন আমাদের শত্রুরা প্রতিদিন আমাদের ভূমি ও অধিকার গ্রাস করছে। সত্যকে তার মতোই প্রকাশ করতে হবে, কোনো প্রকার সম্ভ্রম বা দ্বিধা ছাড়া। আমি এই পিটিশন নিজের সক্ষমতায় স্বাক্ষর করছি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি এই স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার, যে ওই ভিত্তিকে ধ্বংস করেছে, যার ওপর আমাদের ফিলিস্তিনি সংগ্রামের লক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং যাতে থাকা উচিত।’
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর