দুধের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না সাতক্ষীরার খামারিরা

0

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা॥ পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও স্থানীয়ভাবে দুধ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাতক্ষীরার দুগ্ধ খামারিরা। ফলে দুধের ন্যায্যমূল্য পেতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। খামারিরা বলছেন, যে দুধ অন্যান্য জেলায় ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয় সেই দুধ সাতক্ষীরায় বিক্রি হয় ৩৩-৩৮ টাকায়। অথচ এক লিটার বোতলজাত পানির মূল্য ২০-২২ টাকা। দুধের দাম না পেয়ে খামারে অনীহা দেখা সৃষ্টি হচ্ছে। সাতক্ষীরা শহরের তালতলা এলাকার দুগ্ধ খামারী আব্দুল কাদের জানান, ‘ফার্মের ৩২টি গাভি প্রতিদিন ১৫০-১৭০ লিটার দুধ দেয়। যা মিল্ক ভিটার কাছে ৩৩-৩৮ টাকায় বিক্রি করি। দুধ বেশি সময় রাখা যায় না বিধায় কোম্পানি যে দাম দেয় তাই নিতে হয়। স্থানীয় বাজারে ৪০-৪৫ টাকা দরে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে চাহিদা কম থাকায় কোম্পানির কাছে কম দামে দুধ বিক্রি করতে হয়। ফলে লোকসান পোহাতে হয়।’
সাতক্ষীরার সুলতানপুর এলাকার খামারী ওমর আলী জানান, জেলায় দুধ বেশি উৎপাদন হয় বলে এখানে প্রসিদ্ধ কিছু মিষ্টির কারখানা গড়ে উঠেছে। জেলার দধি, সন্দেশ সারাদেশে খ্যাতি অর্জন করছে। অথচ খামারিরা দুধের ন্যায্যমূল্য পায় না। আমার ১৫টি গরু দুধ দেয়। শহরে কোনো কোম্পানির দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র না থাকায় স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি করি।’ একই এলাকার খামারী রাশিদা বেগম জানান, ‘বর্তমান বাজারে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। দুধের সঠিক দাম পেলে ভালো লাগে। কিন্তু কোম্পানি যখন যে দাম বলে সেই দামেই বিক্রি করতে হয়। দুধতো রেখে দেয়া যায় না।’ তিনি আরও জানান, ‘করোনাকালে সরকার খামারীদের যে টাকা দিয়েছে সেটা পেয়ে কিছুটা কাজে লেগেছে। এছাড়া দুধ উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। দুধের দাম না বাড়লে আর গাভি পালন করব না বলে ভাবছি।’
সাতক্ষীরা জেলা ডেইডরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাম প্রসাদ মণ্ডল জানান, ‘দুধের ফ্যাটের উপর নির্ভর করে মূল্য নির্ধারণ হয়। কিন্তু দুধের ফ্যাট নির্ধারণে নিজেদের যন্ত্রপাতি না থাকায় কোম্পানিগুলো টেকনিক্যাল ইস্যু দেখিয়ে যে মূল্য নির্ধারণ করে তাই মেনে নিতে হয়।’ তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরাতেই যদি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত ও পাস্তুরিকরণ করা যায় তাহলে খামারিরা ন্যায়্য মূল্য পাবে।’ তিনি বলেন, দুধ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলার স্বীকৃতি পেয়েছে সাতক্ষীরা। এ জেলায় অস্ট্রেলিয়ার জার্সি, ন্যাড়ামুন্ডো, হরিয়ানা ও সিন্ধি জাতের গাভি বেশি পালন হয়। যদি কানাডা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নত জাতের বীজ আনা যেত তাহলে খামারিরা আরও বেশি উপকৃত হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ‘জেলায় প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামার আছে ২২ হাজার ১৬২টি। এসব খামার থেকে দৈনিক পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫৬ লিটার দুধ উৎপাদন হয়’। তিনি জানান, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত দুধের বড় অংশ মিল্ক ভিটা, ব্র্যাক ও প্রাণ কোম্পানি ক্রয় করে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, সাতক্ষীরায় প্রতিদিন ১.১৮ লাখ মেট্রিক টন (১ লাখ ৮১ লিটার) দুধের চাহিদা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এ দুধের বেশিরভাগ মিষ্টি, দধি, ঘি ও মাখন তৈরির জন্য স্থানীয় বাজারে ব্যবহার হয়। দুধ উৎপাদন ও বিক্রির কাজে কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘তেমন প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে সাতক্ষীরা থেকে কোম্পানিগুলো দুধ কিনছে ৪০-৪৫ টাকা লিটার। কিন্তু অন্য জেলায় ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’ তিনি জানান, যেহেতু দুধ কাচা পণ্য। এটা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে যদি কোনো প্রোজেক্ট করা যায় বা তরল দুধ থেকে ড্রাই পাউডার দুধ উৎপাদন করা গেলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে কালিগঞ্জে একটা প্রোজেক্ট গড়ার প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।