নারী চিকিৎসকের মরদেহে গভীর ক্ষত, কাটা হয় শ্বাসনালী: চারজন ডিবি হেফাজতে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) মরদেহে গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পিঠে ও কোমরের উপরে এবং গলার ক্ষতগুলো লক্ষ্য করা যায়। সোমবার (৩১ মে) বিকেলে সাংবাদিকদের এ কথা জানান রাজধানীর নিউ মার্কেট-কলাবাগান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান। চিকিৎসক লিপির বাসায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুনটা কখন লেগেছিল ঘটনাটি তদন্তের বিষয়। এখনই বলা যাচ্ছে না। এসি শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে সিআইডির ক্রাইম সিন এসে তথ্য সংগ্রহ করে। ইতোমধ্যে মরদেহ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করব। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
লিপির মরদেহ উদ্ধারের পরপরই ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ক্রাইম সিন জানায়, লিপিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিল্ড) করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পরই তার বিছানার তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন ছড়াতে পারেনি। তবে লিপির দেহের কিছু অংশ পুড়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে লিপির শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে পোড়া ক্ষতও ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে মধ্যরাতে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে- সাবলেটে থাকা এক মডেল ও শিক্ষার্থী কানিজ সুবর্ণা, শিক্ষার্থীর বন্ধু মাহাথির মোহাম্মদ স্পন্দন, বাসার দারোয়ান রমজান আলী ও গৃহকর্মী রয়েছেন। সোমবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীর কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেন ভবনের নিজ ঘর থেকে সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। কবির হাসান নামে নিহতের এক আত্মীয় জানান, সাবিরা রহমান লিপি ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তার এক ছেলে (২১) ও এক মেয়ে (১০) রয়েছে। তারা গ্রিন রোডে নানীর বাসায় থাকে। তার স্বামী শামসুর আজাদ একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি থাকেন ঢাকার শান্তিনগরে। তবে ওই বাসায় গিয়ে জানা যায়, তিনটি কক্ষের মধ্যে একটিতে লিপি একাই থাকতেন। বাকি দুটি কক্ষে সাবলেট দিয়েছিলেন। বাড়ির মালিক মাহবুব ইসলাম বলেন, সাবলেট দেয়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। মরদেহ উদ্ধারের পর জানতে পারি বাকি দুটি কক্ষ তিনি অন্যজনের কাছে ভাড়া দিয়েছিলেন।
এদিকে, রাজধানীর কলাবাগান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (৩১ মে) বিকেলে ডিবি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা এক শিক্ষার্থী, তার এক বন্ধু, বাড়ির দারোয়ান রমজান ও কাজের একজন মেয়েকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’
ডিবি সূত্র জানায়, ডা. সাবিরা দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গেও তার বনিবনা ছিল না। সাবিরার আগের স্বামীর ঘরে ২১ বছরের এক ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ১০ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনো কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।’ নিহত চিকিৎসকের খালাতো বোন জাকিয়া খন্দকার মমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সে আমার মেজো খালার মেয়ে। বয়স ৪৭ এর মতো। গ্রিন লাইফ হাসপাতালে বেশ কয়েক বছর ধরে চাকরি করছে। তার স্বামী সাবেক ব্যাংকার। আজকে সাবিরার অফিস ছিল এবং বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। আমার মনে হয় আশেপাশের কেউ শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করেছে।’