শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কেশবপুরে বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা : অভাবে শিশুরা দিচ্ছে শ্রম

0

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর ) ॥ করোনাকালে সারা দেশের মত কেশবপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রীরা যেমন বাল্য বিয়ের শিকার হচ্ছে, তেমনি ছাত্ররা ইন্টারনেটে অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না থাকায় তাদেরও বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় অনলাইন ক্লাসে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকসহ সচেতনমহল।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, কেশবপুর উপজেলায় শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ থেকে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার কথা। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় অপরিকল্পিতভাবে ৭২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫২টি মাদরাসা ও ১১টি কলেজ গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সঙ্কট রয়েছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮ হাজার ২৮৮ জন, মাদরাসায় ৭ হাজার ৫৮৭ জন ও কলেজে ৪ হাজার ৭৪৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার ছাত্রীরা সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবার পর অনেক গরিব পরিবারের অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া সচেতনতার অভাবে সংসারের প্রয়োজনে অনেক শিক্ষার্থী শিশু শ্রমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
এদিকে, করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের মত এ উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিশু শ্রম, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার, অসৎ সঙ্গসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেধাবী ছাত্রীরা হচ্ছে বাল্য বিয়ের শিকার। বাল্য বিয়ের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ও মামলার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব পরিবার থেকে সমাজে পড়ছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শিক্ষকদেরও বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের মুনছুর রহমান জানান, তার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় তার ছেলে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছিলো। এখন তার ছেলে মৎস্য ঘেরে শ্রম দিচ্ছে। সে এখন প্রতিদিন ২শ টাকা আয় করে । একাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ভাবে শ্রম দিয়ে চলেছে। কেশবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কানাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, আমার স্কুলের অনেক ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে অ্যাসাইনমেন্ট জমা হচ্ছে না। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্কুলসহ শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের কোন যোগাযোগ নেই। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা কঠিন হয়ে পড়বে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপ্তাহে অন্তত একদিন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি পূরণে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে।