বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাট চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় যশোরের চাষিরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর পাট চাষ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। গত বছরে পাটের ভালো দাম পেয়ে এবছর বেশি লাভের আশায় সাধ্যমত পাট আবাদ করেছেন। কিন্তু প্রত্যাশিত বৃষ্টি না হওয়ার পাশাপাশি তীব্র খরার কারণে ক্ষেতে পাটের চারা নষ্ট হওয়া উপক্রম। এ অবস্থায় চাষিরা পাটের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই ছয়টি জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৬২ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমি। কিন্তু ইতোমধ্যে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে।এরমধ্যে যশোর জেলায় ২৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় ২২ হাজার ৮৬০ হেক্টর, মাগুরা জেলায় ৩৫ হাজার ২৭০ হেক্টর, কুষ্টিয়া জেলায় ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০ হাজার ২১৫ হেক্টর ও মেহেরপুর জেলায় ২০ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। শুধুমাত্র মাগুরা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে। গেল বছর (২০২০-২১) সোনালী আঁশ (পাট) বিক্রয়ে দাম ভাল পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন কৃষক। তাই এবার যশোর অঞ্চলের কৃষকরা উৎসাহ উদ্দীপনায় পাট চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। এজন্য এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। পাট চাষের উপযুক্ত সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শুরুর দিকে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ক্ষেতের পাট বড় হওয়ার সময়ে এসে এ অঞ্চলে দেখা দেয় দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহ। এতে অধিকাংশ জমিতেই সেচ নির্ভর হয়ে পড়েন চাষিরা।
কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দাম পড়ে যাওয়ায় চাষিরা পাট চাষ প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু গতবছর পাটে বেশ ভাল দাম পাওয়ায় এবছর তারা বেশি করে পাট আবাদ করেছেন। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাট গাছের আকৃতি বৃদ্ধি ও ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
জেলার সদর উপজেলার খাজুরার তীরের হাটের কৃষক আব্দুস সবুর বলেন, এবছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। প্রথম দিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় ক্ষেতের পাটের চারা বেশ সুন্দর হয়েছে। তবে গাছ বড় হওয়ার সঠিক সময়ে এসে বৃষ্টি কম হওয়ার পাশাপাশি তীব্র খরার কারণে পাটের চারার ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ভারি বৃষ্টিপাতের খুবই জরুরি। বৃষ্টি না হলে পাট গাছ লম্বা হবেনা। আর আকৃতি ছোট হলে ফলনও কম হবে। একই কথা বলেন, বাঘারপাড়ার প্রেমচারা গ্রামের কৃষক শামীম আকতার। তিনি বলেন, ক্ষেতে পাটের চারা এখন তরতাজা। এ অবস্থায় বৃষ্টি হলে গাছগুলো আরও সতেজ হয়ে উঠতো। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃষ্টি হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমাদেরকে বাড়তি খরচ দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে পাট চাষে এ বছরও লাভবান হবে বলে তিনি আশা করেন। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরে যশোরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সাথে তাপমাত্রাও বাড়তি। যে কারণে পাট চাষের জন্য কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের। তারপরও আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকেদের পাট ক্ষেতে নিয়মিত সেচ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছি। তিনি বলেন, পাটের ফলনের জন্য বৃষ্টি-খরা দুই-ই প্রয়োজন। মাঝে মধ্যে খরা হবে আবার মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু এবার এর কিছুটা ছন্দপতন হচ্ছে। তারপরও আমরা আশা করছি, কৃষক তার পরিচর্যা ও সেচের মাধ্যমে পাট ক্ষেতের যতœ নিয়ে ভালো ফলন পাবেন।