গুটিয়ে যাচ্ছে গণটিকাদান কর্মসূচি

0

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ॥ ফুরিয়ে আসছে ভ্যাকসিনের মজুত। গুটিয়ে যাচ্ছে গণটিকাদান কর্মসূচি। হাতে আছে মাত্র সাড়ে ৪ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। যা দিয়ে ৪-৫ দিন টানা যেতে পারে কর্মসূচি। ঘাটতি টিকার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ ডোজ। টিকার ঘাটতির কারণে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও রাঙ্গামাটি জেলায় এই কর্মসূচি গত ৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। একই কারণে ঢাকা মহানগরে চলতি মাসের ১৬ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রসহ ৯টি কেন্দ্র বন্ধ ছিল। পরের দিনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা বিতরণ হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক এ ব্যাপারে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, টিকার ঘাটতির কারণে কর্মসূচি বন্ধ করতে হয়েছে। কিছু টিকা অন্যান্য কেন্দ্রে দিয়ে সমন্বয় করা হচ্ছেও বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, দেশে যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের সংখ্যা ৫৮ লাখের কিছু বেশি। এ পরিস্থিতিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণকারীরা আছেন দুশ্চিন্তায়। প্রশ্ন হচ্ছে-এই ঘাটতি টিকার কি হবে? বিভিন্ন উৎস থেকে এনে এই ঘাটতি পূরণ করতে সরকার নানা দৌড়ঝাঁপও করছে। কোন্‌ উৎস থেকে এই টিকা আসবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আগামী এক মাসের মধ্যে এই টিকার সংস্থান হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উৎসই এই টিকা দেয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোনো ব্যক্তিকে একই টিকার দুই ডোজ নিতে হবে। অন্য টিকা গ্রহণ করার সুযোগ নেই তার। ফলে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণকারীরা এখন একই টিকা পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিতে না পারলে ওইসব টিকা গ্রহণকারীদের জন্য বৈজ্ঞানিক পথ খুঁজবেন তারা। তবে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে গত সপ্তাহে খবর বেরিয়েছে ভারত আগামী মাসে বাংলাদেশকে চুক্তির কিছু টিকা দিতে পারে। যদিও তা এখন নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে, গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে খুবই চিন্তিত বলে জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় ডোজের বিষয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ করছেন। আমাদের তো তিন কোটি ডোজের অর্ডার আছে। তারা এ পর্যন্ত আমাদের ৭০ লাখ ডোজ দিয়েছে। এ ছাড়া টিকার বিষয়ে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কিছু অগ্রগতিও আছে। যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে তাকে একই টিকা নিতে হবে। এই টিকা আগে ৮ সপ্তাহ পরে নেয়ার কথা বললেও এখন তা ১২ সপ্তাহ থেকে ১৬ সপ্তাহের (৪ মাস) মধ্যে নেয়া যাবে বলে মত দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বৃটেনে এই টিকা উল্লিখিত সময়ে নেয়ার উদাহরণও টানছেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক বলেন, আশা করি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই একই টিকা পেয়ে যাবেন। এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সরকার বিকল্প উৎস থেকেও এই টিকা সংগ্রহ করার জন্য কাজ করছেন। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, যারা প্রথম ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তাদেরকে একই টিকা দিতে হবে। অন্য টিকা তারা গ্রহণ করতে পারবে না। তারা প্রথম ডোজ নেয়ার পরবর্তী তিন মাস পর একই টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করবেন। কিন্তু এখন টিকার মজুত ফুরিয়ে আসছে। তবে আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে চলে আসবে। তাতে সমস্যা হবে না। যদি যথাসময়ের মধ্যে টিকা না আসে সেক্ষেত্রে এই টিকা গ্রহণকারীদের ভবিষ্যৎ কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক তথ্য যেভাবে বলবে সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যভাবে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দিবে। সেই আলোকে আমাদের এগুতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস-এর তথ্য মতে, ১৬ই মে ঢাকা মহানগরীর ৪৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতে টিকাদান বন্ধ ছিল। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) সাভার, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ঢাকা, বিএনএস হাজী মহসিন, মেডিকেল স্কোয়াড্রান বিএএফ বেজ বাশার, মেডিকেল স্কোয়াড্রান বিএএফ বঙ্গবন্ধু কেন্দ্র, সচিবালয় ক্লিনিক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ও বর্ডার গার্ড হাসপাতাল। পরের দিনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু গত তিনদিন ধরে এই কেন্দ্রে অল্প পরিসরে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। এ ছাড়া ১৬ই মে থেকে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও রাঙ্গামাটি জেলায় টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।