ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকি

0

করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ভারত ফেরত কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬ জনের শরীরে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট অন্তত দুই ডজন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গতকারণেই এতে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইাসের এই ধরণটি অন্যান্য ধরণ থেকে আলাদা এবং ভয়াবহ। এটি দ্রুত ছড়ায় এবং অধিক সংখ্যক লোককে একসঙ্গে সংক্রমিত করতে পারে। এমন কি, টিকা নেয়ার পর টিকার দেয়াল ফাঁকি দিয়ে এই ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমিত করতে পারে। এর ভয়ংকরতা ভারতজুড়ে দৃশ্যমান। ভারতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন রেকর্ড ভঙ্গ করছে, যা ইতোমধ্যে দৈনিক ৪ হাজারে উপনীত হয়েছে। সংক্রমণেরও প্রতিদিন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। বলা হয়েছে, ভারতে শনাক্তকৃত রোগীদের অন্তত ২০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে এ ভ্যারিয়েন্টে। ভারতের নিকট প্রতিবেশী নেপালে এই ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপক সংক্রমণ ও প্রাণহানির কারণে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় অভিঘাত শুরু হওয়ার পর সংক্রমণ ও প্রাণহানী দ্রুত বেড়ে যায়। আক্রান্ত ৭ হাজারের ওপর ও প্রাণহানি ১শ’র বেশি হয় এক নাগাড়ে কয়েকদিন। আইসিইউ বেড ও অক্সিজেনের জন্য হাহাকার ওঠে। এহেন বাস্তবতায় সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয় এবং স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে কঠোরতা আরোপ করা হয়। এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যেই আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা কমেছে। আইসিইউ বেড এখন অনেক খালি। অক্সিজেনেরও কোনো সংকট নেই।
ভারতীয় ভাইরেন্টের সন্ধান লাভ বিভিন্ন মহলে অশেষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। কুম্ভুমেলা ও বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী জনসভা ইত্যাদি ভারতে করোনার অপ্রতিরোধ্য বিস্তার ও মৃত্যুর কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছেন, ঘরে থাকা এবং বাইরে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই করোনা থেকে রেহাই বা সুরক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ ও চলাফেরা করা নিশ্চিত হলে প্রায় শতভাগ নিরাপদ থাকা সম্ভব। এমতাবস্থায়, আমাদের উচিৎ হবে, খুব প্রয়োজন না হলে ঘরেই থাকা। বাইরে বেরোলে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা। কোনো সরকারের পক্ষেই জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারটি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। যে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের তৎপর হওয়ার বিকল্প নেই। নাগরিকের সুস্বাস্থ্য স্বাস্থ্যবান জাতির পরিচয় বহন করে। এই দায়িত্ব বোধ ও বিবেচনা সামনে রেখে সরকারকে যথাযোগ্য পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে হবে। চলমান লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে যে অবস্থা ও দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা অত:পর দূর করতে হবে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যে আশংকার জন্ম দিয়েছে, যে কোনো মূল্যে, তার মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে লোক যাতায়াত আগেই বন্ধ করা হয়েছে। এর কালপরিধি সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরো বাড়াতে হবে। পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, স্থল বন্দরগুলোতে মালামাল আমদানি-রফতানি অব্যাহত আছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা করছে না। এর মধ্যে অবশ্যই বিরাট ঝুঁকি রয়েছে। কাজেই, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। দরকার হলে আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে। সবার আগে জীবনের নিরাপত্তা। সেটা অরক্ষিত রাখা যেতে পারে না। এব্যাপারে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা রোখার ব্যবস্থা করতে হবে। দূরপাল্লার যানবাহন চালু করার যে দাবি উঠেছে, তা কোনোভাবেই মানা যাবে না। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, গতবার এই ঈদে শেষ পর্যন্ত গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছিল, যার ফল শুভ হয়নি। ঈদের পর শহর ও গ্রামে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এবার কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তারপর, বলা নিষ্প্রয়োজন, অনেক মানুষই শহর থেকে গ্রামে যাবে এবং গ্রাম থেকে শহরে ফিরবেন তাদের জন্য পরীক্ষা, চিকিৎসা, অক্সিজেন ও আইসিইউ’র ব্যবস্থা রাজধানীসহ সকল জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে মজুদ রাখতে হবে। সরকার তার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তো নেবেই, আমরা আশা করবো, মানুষও যথার্থ সর্তকতা, সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।