পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

0

‘ঈদ’ মানে আনন্দ। পবিত্র ঈদুল ফিতর প্রতি বছর নিয়ে আসে খুশির বারতা। শাওয়ালের নতুন চাঁদ তাই মুসলিম উম্মাহর কাছে বহুল প্রত্যাশিত। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে আজ শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর আমরা উদযাপন করি ঈদুল ফিতর। তাই রমজানের সিয়াম সাধনার প্রভাব পড়া স্বাভাবিক এ উৎসব উদযাপনে। রোজার ত্যাগ-তিতিক্ষার শিক্ষা চারিত্রিক উন্নতি বিধানের অনন্য প্রশিক্ষণ। তারই প্রতিফলন থাকা বাঞ্ছনীয় ঈদ উৎসবে। সমাজের ছোট বড় সবাই যেন এক কাতারে ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ পান, পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দিন। সেই সাথে আমাদের প্রত্যাশা, পুরোপুরি বৈষম্যহীন সামাজিক ন্যায্যতা যেন আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়। সেই মানবিকতার উপলব্ধি না হলে ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণতা আনা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের সবার মাঝে ঈদুল ফিতরের সেই পরিপূর্ণ ও প্রকৃত সুখবোধ ছড়িয়ে দিন, আজকের দিনে সেটিই প্রার্থনা। বাস্তবে এবারো ঈদ আমাদের জীবনে আসছে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। এখনো করোনা আতঙ্কে দেশবাসীর বসবাস। সবার মনেই নিদারুণ শঙ্কা, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে কে কখন না জানি আক্রান্ত হন; এই দুশ্চিন্তায় প্রতি মুহূর্ত পার করছি আমরা। এমন বাস্তবতায় দ্বিতীয়বারের মতো এবারো দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, ঈদ অন্য ১০টি উৎসবের মতো নয়, এটি ধর্মীয় সংস্কৃতিকেন্দ্রিক উৎসব। উৎসবের নামে বাড়াবাড়ি বা স্থূলতা পরিহারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা সবার কর্তব্য।
এ দেশের গরিষ্ঠ মানুষের বসবাস গ্রামে। শহরকেন্দ্রিক মানুষজন এখনো ছুটে যান গ্রামে। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার রেওয়াজ আমাদের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। স্বজনের টানে ছুটে চলা মানুষ এখনো তাদের সান্নিধ্য পেতে চান। এর মানবিক ও সামাজিক আবেদন বিপুল। এই ঐতিহ্য লালনে আমাদের পারিবারিক বন্ধন শুধু দৃঢ় হয় না; পরিবার ব্যবস্থা বিলুপ্তির মোকাবেলায় এটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু করোনা অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে হওয়ায় এর প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই কার্যকর উপায়। অথচ সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঈদ উপলক্ষে অনেকেই যেভাবে পারছেন গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে পাবলিক প্লেসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এতে ব্যাপকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এবারো সবাই ঈদ কর্মস্থলে করাই বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া করোনাকালে যারা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি করে সহযোগিতা করা ঈমানি দায়িত্ব। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় ঈদ আমাদের জাতীয় উৎসব। জীবনঘনিষ্ঠ এ উৎসবে নির্মল আনন্দ উপভোগ করে সব শ্রেণীর মানুষ। ধনী-গরিব ব্যবধান ভুলে সবাই ঈদের আনন্দে শরিক হয়। রোজাদার ঈদের নামাজে শরিক হওয়ার আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে থাকেন। উৎসব হিসেবে ঈদ এতটাই সর্বপ্লাবী যে, এটি অতুলনীয়। ঈদ যেন মুসলিম জীবনে অনিঃশেষ আনন্দের ফল্গুধারা। দুঃখ-বেদনা, শ্রেণিবৈষম্য ও আশরাফ-আতরাফের ব্যবধান ভুলে মানুষ সাময়িকভাবে হলেও এককাতারে দাঁড়ান ঈদের দিন। একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। শত্রু হয়ে যায় বন্ধু। তাই ঈদের তুলনা শুধু ঈদ, আর কিছু নয়। করোনাকালেও আমরা যখন ঈদ আনন্দ উপভোগ করব, তখনো পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অন্যান্য বিপন্ন এলাকায় মৃত্যুর প্রহর গুনবে। সেসব অসহায় লাখো নর-নারী-শিশুর কান্নার ধ্বনি আমাদের ব্যথাতুর করে তুলবে। দেশে দেশে মজলুম মানুষের আহাজারি শুনে আমরা অসহায় বোধ করি। তার পরও উম্মাহর দুয়ারে ঈদ হাজির হয় খুশির বারতা নিয়ে। ঈদের আনন্দে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব না হলেও তাদের বিপদ মুক্তির জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে দোয়া করব আমরা। বিশেষ করে করোনা থেকে যেন আল্লাহ আমাদেরসহ বিশ্ববাসীকে নাজাত দেন। ঈদ আমাদের জীবনে অর্থবহ আনন্দ বয়ে আনুক। তাৎপর্যময় হোক এ সুমহান উৎসব। জাতীয় জীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়–ক। এ প্রত্যাশায় সবাইকে ঈদ মোবারক।