কোয়ারেন্টিনের ভারত ফেরতরা ঈদের দিন পাবেন জেলা প্রশাসনের আথিতেয়তা

0

তহীদ মনি ॥ যশোরের ১৮টি হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টিনে থাকা ২ হাজার ৫৭১ জনের এবারের ঈদ কাটবে পরিবার স্বজনছাড়া ভিন্ন পরিবেশে। এদিন যশোর জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টিনে থাকা মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদের জামাত হবে সংশ্লিষ্ট হোটেলসহ প্রতিষ্ঠানের ছাদে। এছাড়া এদিন সকাল ও দুপুরে জেলা প্রশাসনের আথিতেয়তা উপভোগ করবেন তারা। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বন্ধ হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে যারা দেশে এসেছেন তারাই যশোরসহ ৬ জেলায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। যশোরে কোয়ারেন্টিনে থাকাদের মধ্যে প্রখ্যাত নাট্যাভিনেতা মোশাররফ করিমও রয়েছেন।
দীর্ঘ এক মাস রমজানের রোজা শেষে ঈদ-উল-ফিতর আগামীকাল বৃহস্পতিবার অথবা, শুক্রবার উদযাপিত হবে। এদেশের প্রচলিত নিয়ম ও প্রথা অনুসারে এই ঈদ সাধারণত পরিবারে সবাইকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজন পাড়া পড়শির সাথে মিলে মিশে পালন করা হয়। সাধ্যমত দান করা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাসহ নানা ব্যস্ততায় ও আনন্দে মুখোরিত হয় ঈদ। সেই ব্যস্ততা ও বাস্তবতা থেকে দূরে অবস্থান করে ভিন্ন মাত্রায় এবং ভিন্ন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে হবে এই ২ হাজার ৫শ’ ৭১ জনকে। হোটেল কক্ষের একাকিত্ব ও ঈদ হয়তো তাদের ও তাদের স্বজনদের নতুন কোনো বার্তা দেবে।
এদিকে, যশোর জেলা প্রশাসনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, যদিও কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারত ফেরত যাত্রীদেরকে নিজ খরচেই থাকা-খাওয়ার বিধান রয়েছে। তবে ঈদের দিন তাদেরকে যশোর জেলা প্রশাসনের অতিথি হিসেবেই সংশ্লিষ্ট হোটেলে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার, পরিবেশন করা হবে। এই তালিকায় যুক্ত হবে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্য যে প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে সেখানকার মানুষদের। সরকারি হাসপাতালে সরকরিভাবেই উন্নত খাবার সরবরাহ করা হবে। এছাড়া ঈদের দিন সংশ্লিষ্ট হোটেল ও প্রতিষ্ঠানের ছাদে ঈদ জামাত হবে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত বাংলাদেশীদের জন্যে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত ফেরত অনেকের সাথে টেলিভিশনের প্রিয় নাট্যাভিনেতা প্রিয় মুখ মোশাররফ করিম স্ত্রীসহ রয়েছেন। যশোরের জাবির ইন্টারন্যাশনালে তাদের ঈদ কোয়ারন্টিনে থেকে কাটবে যশোরে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি সূত্রে জানা যায়, অতিমারী করোনার কারণে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর পর বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ফেরা বাংলাদেশীদের জন্যে বেনাপোল, ঝিকরগাছা গাজীর দরগাহ যশোরের হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা হয়। দিন দিন ভারত ফেরত যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পার্শ্ববর্তী মাগুরা, সাতক্ষীরা, খুলনা, নড়াইল ও ঝিনাইদহে জেলায় স্থানান্তর করা হয় অনেককে। এদের প্রত্যেককে নিজ খরচে হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট হোটেলকে ভাড়া ৫০ শতাংশ মওকুফ করার অনুরোধ করেছেন। ভারত ফেরত করোনা পজেটিভ যাত্রীদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে যাদের কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে এবং করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে তারা জেলা প্রশাসনের প্রত্যয়নপত্রপ্রাপ্তি সাপেক্ষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন। যশোর জেলা প্রশাসনের সূত্র মতে, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ কেেছ ২ হাজার ৬শ’ ৯৯ জন পাসপোর্টধারী। এদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১শ’ ৩৪ জন প্রত্যয়নপত্র সাপেক্ষে বাড়ি ফিরে গেছেন। অবশিষ্ট ২ হাজার ৫শ’ ৭১ জন এবার ঈদ করবেন কোয়ারেন্টিনে থেকে।  সূত্র জানিয়েছে, যশোর সদরের ১৮টি হোটেলে ৪৫৪ জন বেনাপোলের ১৩টি হোটেলে ৩৯৭ জন, নড়াইলে ১২১ জন, ঝিনাইদহে ১৬৩ জন, খুলনায় ৫২৩ জন, সাতক্ষীরায় ৩৩০ জন, মাগুরায় ১০১ জন ও বাগেরহাট জেলায় ২৫ জন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এছাড়াও ঝিকরগাছা গাজীর দরগাহ মাদ্রাসায় ১৪০ জন, যশোরের বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ৯৯ জনসহ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকেও কয়েকজন রয়েছেন।