টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে টিকার চালান ফুরিয়ে আসায় ১৫ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কীভাবে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর। নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য হাসপাতালে গেলে এসএমএস না এলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে টিকাগ্রহীতাদের। ফলে বাড়ছে অসন্তোষ। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, গতকাল পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৮৬ জন। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় আছেন ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৭১৪ জন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আছে ৮ লাখের কিছু বেশি টিকা।
গত রবিবার ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকের দ্বিতীয় ডোজের নির্ধারিত তারিখ থাকার পরেও তারা টিকা নেওয়ার এসএমএস পাননি। ফলে তারা টিকা নিতে পারেননি। বনশ্রী থেকে আসা সোহেল হোসেন বলছেন, ‘আমার কাগজে টিকার তারিখ দেওয়া আছে ৮ মে। কিন্তু এখানে আসার পরে বলছে, এসএমএস না এলে টিকা দেওয়া হবে না। উত্তরা থেকে এসেছেন রুখসানা পারভীন। তার টিকার তারিখ ৭ মে হলেও এখনো তিনি এসএমএস পাননি। টিকার কাগজ নিয়ে এসেও তিনি টিকা নিতে পারেননি। প্রথম ডোজ পাওয়া কত মানুষ দ্বিতীয় ডোজ আপাতত পাবেন না, তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। ৫ মে সংবাদ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সৌমিয়া সোয়ামিনাথান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হচ্ছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ১২ সপ্তাহ (তিন মাস) পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধির উদাহরণ রয়েছে। এর ফলে আরও বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তিনি বলছেন, এ ধরনের টিকার ক্ষেত্রে দুটি ডোজ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে যদি কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ দেরিও হয়, তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া দরকার। কারণ প্রথম ডোজে আসলে নতুন অ্যান্টিজেন শরীরের ভিতর প্রবেশ করে, দ্বিতীয় ডোজের মাধ্যমে সেটার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেছেন, ‘অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজের পর ১২ সপ্তাহ, এমনকি তার পরেও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যেতে পারে। ফলে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর যারা বাকি থাকবেন, তাদের কবে টিকা দেওয়া যাবে, সেটা নির্ভর করবে টিকা হাতে পাওয়ার ওপরে। আমরা আশা করছি, তাদের টিকার কার্যকারিতা সময়ের মধ্যে টিকা আসবে।’ ড. সৌমিয়া সোয়ামিনাথান বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানও পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন বিশ্বে যেসব ট্রায়াল চলছে, সেখানে দুই ধরনের দুটি টিকা নেওয়ার পরীক্ষাও করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত দুই কোম্পানির দুই ডোজ টিকা নেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে নেই। তবে এখন পর্যন্ত এটাই সুপারিশ করা হচ্ছে যে, যারা প্রথম ডোজ যে টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও সেটা নেবেন। দুই কোম্পানির দুটি আলাদা ডোজ নেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমবে বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি এক টিকার সঙ্গে অন্য টিকা নেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। ফলে যারা কভিশিল্ড পেয়েছেন, তারা সেটাই পাবেন।’