আবার বাড়ছে কিশোর অপরাধ

0

বিশ্বে করোনাভাইরাস অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে অনেক ধরণের অপরাধ কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি প্রকার অপরাধ বাংলাদেশেও কমে আসার খবর বেরিয়েছিল গত বছর। এখন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আগের চেয়েও প্রবল প্রাণঘাতী আকারে দেখা দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন করে লকডাউনের ভেতরই দেশে কিশোর অপরাধিচক্রের মাথাচাড়া দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের মধ্যেও ঢাকা-নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া আচরণের শিকার হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণ। প্রশাসন ও স্থানীয়ভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অবশ্য করোনাভাইস অতিমারী শুরুর আগে থেকেই কিশোর গ্যাং কালচার দেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। লকডাউনের সময় অন্য সব অপরাধ কমে গেলেও কিশোর অপরাধিদের তৎপরতা অব্যাহত থাকার পেছনে সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানাবিধ সংকটের কথা বলছেন দেশের সমাজ বিজ্ঞানী, অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এমনকি, পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের পক্ষ থেকেও কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠা ও তাদের বেপরোয়া কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
করোনাকালেও কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম সামাজিক কারণ হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা, শিশু-কিশোর সন্তানদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেয়া এবং নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক নজরদারি না থাকাকে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কিশোর গ্যাং কালচারসহ দেশের সামগ্রিক দুর্নীতি ও অপরাধচিত্রের জন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেও দায়ী করা হয়। এ কারণে কিশোর গ্যাং কালচারসহ এ ধরণের সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষè নজরদারির পাশাপাশি পিতামাতা, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভূমিকা পূর্নমূল্যায়ণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষত প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষকে উদাসীন ও অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। এক সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর বাধ্যতামূলক ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। পিতামাতা ও অভিভাবকদের ঔদাসীন্য ও দায়িত্বহীন ভূমিকা পরিবর্তন করতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি শিশু-কিশোরদের আসক্তি ও অপব্যবহারের কারণে পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধগুলো শিথিল হয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোররা একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তা অনুধাবন করে প্রশাসনকে ভূমিকা নিতে হবে।