প্রযুক্তিপণ্য বিক্রিতে মন্দা, বাড়ছে মেরামত

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥একদিকে মহামারি কারোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে জনচলাচলে কড়াকড়ি। অন্যদিকে চলছে রোজা। সামনে ঈদ থাকায় সবাই ছুটছে জামা-জুতো কেনার দিকে। তাই ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ক্যামেরাসহ প্রযুক্তিপণ্য বিক্রি কমে গেছে। বিক্রেতারা বলেছেন, দোকান খোলা রাখলেও আশানুরূপ বিক্রি নেই। ক্রেতারা নতুন করে না কিনে বিকল বা ত্রুটিপূর্ণ পণ্যগুলোই মেরামত করিয়ে নিচ্ছেন।অন্যদিকে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের দামও কিছুটা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে আমদানি বন্ধ। আবার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। সেজন্য ল্যাপটপ-ডেস্কটমের দাম বেড়েছে কিছুটা।করোনার কারণে আমাদের অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ আইসিটি পণ্য কিনছে না। আর বেশিরভাগ লোকই নষ্ট হয়ে যাওয়া ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ মেরামত করে চালিয়ে নিচ্ছেন
    রাজধানীর আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটির ফাস্ট ট্র্যাক সলিউশনের কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন  বলছিলেন, ‘আইটি সেক্টরে আসলে টার্গেট করে কেউ ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা করে না। আমি প্রায় দশ বছর ধরে এখানে আছি, তবে এমন কম বিক্রি এর আগে কখনো হয়নি। করোনার কারণে ব্যবসা নেই। গাড়ি চলাচলে কড়াকড়ি। যাদের খুব বেশি দরকার তারা ছাড়া তেমন কেউ আসে না।’
    তিনি বলেন, ‘করোনায় সব ধরনের ল্যাপটপের দাম বেড়েছে। প্রত্যেকটি প্রস্তুতকারক কিংবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, করোনার কারণে তাদের কাছে এখন পণ্যের সরবরাহ কম। আমদানিও করা যাচ্ছে না। তবে দাম খুব বেশি বাড়েনি। প্রতিটি ল্যাপটপ-ডেস্কটপে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেড়েছে।’
    করোনার প্রথম ধাক্কায় ডিজিটাল ক্লাস শুরু হওয়ার সময় ল্যাপটপ-ডেস্কটপের চাহিদা বেশি ছিল জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন আগের মতো চাহিদা নেই।’
    ওশান পেরিফেরল নামে একটি দোকানের মালিক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বলেন, ‘খোলা রাখতে হয় তাই রাখছি। টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। সেটাকে বিক্রি বলা যায় না। আইডিবির নিয়ম অনুযায়ী দোকান খোলা রাখতেই হবে। দোকান খোলা না রাখলে লিস্ট করে নিয়ে যায়। এজন্য দোকান খোলা রেখেছি।’
    নতুন করে যদি ট্যাক্স ধরা হয় তাহলে এই ইন্ডাস্ট্রিটা বসে যাবে। আমাদের দাবি কারও পরামর্শে সরকার যেন ট্যাক্স আরোপ না করে। সব কিছু যেন আগের মতো থাকে
    তিনি বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত মাত্র দুই হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে বিক্রি বাড়বে কি-না বলতে পারছি না। তবে বাস চালুর ওপর বিক্রির বিষয়টি নির্ভর করছে। করোনা ছাড়াও ভবনের সামনে মেট্রোরেলের কাজ চলায় রাস্তা খুব খারাপ। আর যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ির প্রভাবও পড়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ।’
    সেখানে সাইবার কমিউনিকেশন, ওয়ালটন প্লাজা, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড, রায়ানস, ফর আনলিমিটেড, কম্পিউটার সিটি, লজিস্টিকস কম্পিউটার্স, ইস্টার্ন আইটি, ডলফিন কম্পিউটার্সের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
    তারা বলেছেন, সাধারণত ঈদের সময় সাউন্ডবক্স ও টিভি দেখার জন্য মনিটর ও টিভিকার্ডের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু এবার তাও নেই।নেটওয়ার্ক কম্পিউটার লাইন লিমিটেড তাদের শোরুমে বিক্রি ছাড়াও অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে। তবে এখন কুরিয়ারে পণ্য পাঠাতেও সমস্যা হচ্ছে তাদের।
    প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে প্রযুক্তিপণ্যের একটি দোকান
    প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার এস এম আমিনুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গাড়ি চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে আমরা অনলাইনে অর্ডার নিতে পারি না। কুরিয়ারে পাঠাতে গেলে অনেক খরচ পড়ে যায়।’
    তবে দ্য হোম সার্ভিস সেন্টার নামে একটি দোকানে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ মেরামত করানোর জন্য ব্যবহারকারীদের ভিড় দেখা গেছে। অর্ডার নিতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানের কর্মীরা।
    ক্রেতার আশায় বসে আছেন ওশান পেরিফেরলের দুই কর্মী
    এ বিষয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ আইসিটি পণ্য কিনছে না। আর বেশিরভাগ লোকই নষ্ট হয়ে যাওয়া ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ মেরামত করে চালিয়ে নিচ্ছেন।’
    কম্পিউটার পণ্যে যে শুল্ক ও মূসক আরোপ না হয়
    এদিকে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় কম্পিউটার পণ্যে আমদানি শুল্ক ও মূসকের বিষয়ে সরকারের আগের অবস্থানই ধরে রাখার দাবি জানিয়েছেন এখাতের ব্যবসায়ীরা। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আসন্ন বাজেট নিয়ে আলোচনাও করেছেন তারা। কারও পরামর্শে যেন সরকার নতুন করে শুল্ক ও মূসক আরোপ না করে সেদিকে নজর রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা।
    প্রযুক্তিপণ্যের একটি দোকানে বসে আছেন কর্মীরা
    ১৯৯৬ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কম্পিউটার পণ্যে আমদানি শুল্ক ও মূসক নেই।
    এ বিষয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) ভাইস প্রেসিডেন্ট জাবেদুর রহমান শাহীন বলেন, ‘নতুন করে যদি ট্যাক্স ধরা হয় তাহলে এই ইন্ডাস্ট্রিটা বসে যাবে। আমাদের দাবি কারও পরামর্শে সরকার যেন ট্যাক্স আরোপ না করে। সব কিছু যেন আগের মতো থাকে।’