কর বাড়ার শঙ্কায় বিকল্পের খোঁজে ধনী মার্কিনরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥শুল্ক বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিলিয়নেয়ার ও বিলিয়নেয়ারদের নিশানা করেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। যেসব বিনিয়োগকারী আগে তাদের মূলধনি মুনাফার ওপর ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ কর দিতেন, তাদের জন্য সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত কঠিন হতে পারে। এতদিন বিভিন্ন ছাড় ও ট্যাক্স কোডে কিছু কৌশল খাটিয়ে তারা এ কর কমাতে পারতেন। তবে নতুন নিয়ম যা-ই হোক না কেন, সেটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গ্রাহকদের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন ধনী ব্যবসায়ীদের পরামর্শদাতারা। খবর ব্লুমবার্গ।
ওয়েলথস্পায়ার অ্যাডভাইসরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিল শোয়ার্টজ বলেন, আমরা কর ফাঁকি দেব না। তবে যথাসম্ভব এগুলো এড়াতে বা স্থগিত রাখতে চেষ্টা করব। পুরো বিষয়টাই আমাদের জন্য নতুন। আরো অন্তত দুই বছর পেরোলে এটি সম্পর্কে পুরোপুরি বুঝতে পারব আমরা।
ধনী মার্কিনদের আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল যে বাইডেন প্রশাসন ও কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা কর বাড়িয়ে দেবে। মূলধনি মুনাফার ওপর করহার বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করতে চায় বাইডেন সরকার। ১০ লাখ ডলার বা তার চেয়ে বেশি উপার্জনের জন্য করের শীর্ষ হার হবে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। কংগ্রেসে যদি এটা পাস হয় তাহলে ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে।
এ সিদ্ধান্তে শীর্ষ ধনীদের শূন্য দশমিক ১ শতাংশ তাদের রাগ, ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাইডেনের জয়ের পর থেকে স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারবাজারেও কিছুটা হতাশা দেখা গেছে। ওকওয়ার্থ ক্যাপিটাল ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জন নরিস জানান, এটি অবশ্যই চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার মতো বিষয়। তাদের গ্রাহকরা চান যেন অন্তত এ সময়ে এটি পাস না হয়। মনে রাখবেন, দলটির যে ধনী দাতারা আছেন, তারা বিষয়টি পছন্দ না-ও করতে পারেন।
যদিও করনীতিতে কিছু পরিবর্তন আনার বিষয়ে আগে থেকেই সংকেত দিয়েছিলেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রজন্মেরও বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস সদস্যরা বিনিয়োগকারীদের জন্য সবসময় লাল গালিচা প্রস্তুত রেখেছেন। যখন মূলধনি মুনাফার ওপর কর নেয়া হতো না এবং আইনপ্রণেতারা বিনিয়োগকারীদের নির্ধারিত এলাকায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেয়ার জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করতেন। তবে বাইডেন এবার উল্টো পথে হাঁটছেন।
আগে বলা হতো, কর কম দিতে হলে এমন ধরনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, যা আদতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সৃষ্টি করে। তবে এ তত্ত্বকে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ করেন নতুন প্রজন্মের অর্থনীতিবিদরা। তারা নিজেদের যুক্তির পক্ষে বাস্তব প্রমাণগুলোও তুলে ধরেন। বলা হচ্ছে, কয়েক দশক ধরে কর কমিয়ে বা বিনিয়োগকারীদের সুবিধার কথা সবার আগে ভেবে মার্কিন অর্থনীতির আসলে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি সুবিধাভিত্তিক অঞ্চলের মতো প্রণোদনা প্রকল্পেরও প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।
টাইডারম্যান অ্যাডভাইসরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমস বার্টেলস বলেন, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে প্রচুর সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তাই বেশির ভাগ মানুষই ভাবছে যে এবার কর বাড়বে। কিন্তু কোন খাতের কর বাড়বে, সেটি এখনো আমরা জানি না। তবে কর বাড়তে পারে তেমন একটি ধারণা এসব প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের দিয়ে রাখছে।
মূলধনি মুনাফার ওপর কর কেমন হবে তা নির্ভর করছে কেমন প্রস্তাবনা দেয়া হবে তার ওপর। প্রস্তাবনা পাস হলেই বোঝা যাবে যে কোন খাতে কেমন হারে কর বাড়বে। তবে এসব পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের বলেছে উপার্জন ১০ লাখ ডলারের নিচে রাখতে। অর্থাৎ এখন থেকেই গ্রাহকদের যেন কম কর দিতে হয়, সেসব কৌশল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলছে, জীবন বীমাসংক্রান্ত বিনিয়োগও তাদের বিনিয়োগ কর কমিয়ে দিতে পারে। কারণ এখন পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটরা এ বিষয়ে কোনো কৌশলের কথা ভাবেনি।