সংকটে মোংলায় গবাাদি পশু পালন

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট)॥ মোংলা ও সুন্দরবন উপকূলের আশপাশ অঞ্চলে দিন দিন কমছে গবাদি পশু লালন পালন। অতিরিক্ত লবণাক্ততা, সুপেয় পানির চরম সংকট একই সাথে খাদ্য সংকট, দুধের মূল্য কম পাওয়া, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়াসহ নানা প্রতিকূলতায় প্রতিনিয়ত লোকসানের কবলে পড়ে খামারিরা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন গবাদি পশুর খামার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে দ্রুত সময়ে বিলুপ্ত হবে এ অঞ্চলের গবাদি পশু লালন পালন। আর পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন এ অঞ্চলের খামারিরা। খামারিরা এ খাত টিকিয়ে রাখার জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।
সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলাসহ আশপাশ এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময়েই লবণাক্ত আবহাওয়া বিরাজ করে। এ অবস্থায় এখানে খামারিদের গরু, ছাগল লালন পালন করা নিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। লবণাক্ততার জন্য জমিতে গরু ছাগল অবাধে চরাতে পারে না। তীব্র লবণাক্তার জন্য এখানকার জমিতে কোন ঘাসের জন্ম হয় না। এ ছাড়া এখানে ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় গবাদী পশুদের জন্য পর্যাপ্ত খড়-বিচালি-কুটা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে খামারিদের বাজারের খাবারের উপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বাজারে গো খাদ্যর দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত মুল্যে খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
অপরদিকে রয়েছে পশু চিকিৎসকের সংকট। খামারিদের অভিযোগ, পশু হাসপাতালে গেলে বেশিরভাগ সময়ই ডাক্তার পাওয়া যায় না। গরু বা ছাগলের কে নো চিকিৎসা তারা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। যদিও ডাক্তার পাওয়া যায় তাহলে মোটা অংকের টাকা বখশিস দিয়ে চিকিৎসা পত্র নিতে হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে খামারিদের রয়েছে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।
মোংলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের হিসেব মতে, বর্তমানে উপজেলায় বিভিন্ন খামারে পালন করা হচ্ছে ১৬ হাজার গরু, ২০ হাজার ছাগল, ১০ হাজার ভেড়া আর এক হাজার মহিষ । আর প্রতিষ্ঠিত খামারির সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। এ ছাড়া অনেকে বিচ্ছিন্ন ভাবেও গরু ছাগল লালন পালন করে আসছেন। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর আগে এর পরিমাণ ছিলো কয়েকগুণ বেশি। প্রতিনিয়ত ঝড় জলোচ্ছ্বাস আর অতিরিক্ত লবনাক্ততায় গবাদি পশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে এখানে। বাড়তি দামে খাবার কিনে কম মুূল্য দুধ বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। চাহিদা মতে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের। মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোল্লা মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সংকটের মধ্যে দিয়েও এখানকার মানুষ গবাদি পশু লালন পালন করছেন। পশুর খামার লেঅকসানের প্রজেক্ট হওয়ার পরও মানুষ উদ্যোক্তা হয়ে এ কাজটি করে আসছে। এতে মাংস ও দুধের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। লবণ এলাকা হওয়া সত্বেও পরিকল্পিতভাবে যদি ঘাস উৎপাদন করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খামার করা যায় তাহলে এলাকার পুষ্টি পূরণ হবে। তিনি বলেন, গবাদি পশু লালন পালনে যদি সফলতা আনতে হয় তাহলে সরকার, এনজিও এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের পক্ষে অর্থিকভাবে সহায়তা করা হলে খামারিরা টিকে থাকতে পারে। মোংলা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াসিম আকরাম খামারিদের চাহিদা মতো সাড়া দিতে না পারার কথা স্বীকার করে জানান, জনবলসহ এখানে তাদের নানা সংকট রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। দিন দিন নানা কারণে পশু পালন কমছে, তবে এর মধ্যেও তারা সাধ্য মতো চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।