নিভেছে সুন্দরবনের আগুন পুড়েছে তিন একর

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ নানা প্রচেষ্টায় অবশেষে ৩০ ঘন্টা পর সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকার আগুন নিভেছে। ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ, সিপিজি সদস্য ও স্থানীয়দের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং বৃষ্টির পানিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে ওই এলাকায় আগুন নিভে গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত সোমবার দুপুরের দিকে দাসের ভারানি এলাকার আগুন লাগে। এদিকে অগ্নিকান্ডে বনের কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেনি বন বিভাগ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুনে অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, অন্তত ৫ একর বনভূমি আগুনে পুড়েছে। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্চের ধানসাগর স্টেশনের টহল ফাঁড়ি এলাকায় অগ্নিকান্ডে ৩ শতাংশ বনভূমি পুড়ে যায়। এ নিয়ে গেল ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৫ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় মো. কাইয়ুম, মো. ফজলু, সাকিবুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, ‘সোমবার আগুনের ধোঁয়া দেখে আমরা বন বিভাগকে খবর দিই। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা আসলে তাদের সাথে আমরা বনের মধ্যে প্রবেশ করি। লোকালয় থেকে অনেক দূরে গহীন বনে অগ্নিকান্ড সংগঠিত হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমাদের দেরি হয়েছে। বনরক্ষী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাথে আমরাও আগুনের চারপাশে ফায়ার বেজ কাটার কাজ করেছি। দু’দিনে অক্লান্ত পরিশ্রমে সুন্দরবনের আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এই সময়ে সুন্দরবনের অন্তত ৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।’ বন বিভাগের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রপ (সিপিজি) এর সদস্য মো. ফিরোজ বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে আমরা বন বিভাগের সাথে এসে গাছের ডাল কেটে, ফায়ার সার্ভিসের মালামাল বহন করে এবং ফায়ার বেজ কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছি।’ বন সংলগ্ন রসুলপুর গ্রামের আফজাল হাওলাদার বলেন, ‘সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত। সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে। সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু সুন্দরবনের ওপর একের পর এক যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে আমাদেরকে দারুণভাবে ব্যথিত করছে। আগুনে শুধু সুন্দরবনের গাছ পুড়ে ছাই হয় না, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীও হুমকির মধ্যে পড়ে। বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগলেও এর কারণও সাধারণ মানুষকে জানানো হয় না। সুন্দরবন রক্ষায় আগুনের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিৎ।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাগেরহাটের উপ-সহকারী পরিচালক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘সকলের প্রচেষ্টায় দাসের ভারানি এলাকায় দৃশ্যমান সকল আগুন আমরা নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এখন আর কোথাও আগুন নেই। তবে ওই জায়গাটিতে শুকনো পাতার অনেক স্তুপ রয়েছে। যার ফলে কোথাও সুপ্ত আগুন থাকতে পারে। যেহেতু দৃশ্যমান কোন আগুন নেই তাই আমরা অভিযান সমাপ্ত করেছি। এরপরেও কোথাও যদি আগুন দেখা যায় সেক্ষেত্রে বন বিভাগ আমাদের জানালে আমরা আবারও পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’ ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে গোলাম সরোয়ার আরও বলেন, আগুনে দাসের ভারানি এলাকার অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে। ছোট গাছ, লতাপাতাসহ বেশকিছু বড় গাছ পুড়ে গেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ মাহমুদুল হাসান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আমরা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এরপরেও কোথা কোন সুপ্ত আগুন থাকলে সেগুলো নেভানো হবে। প্রয়োজনে আবারও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নেওয়া হবে। অগ্নিকান্ড সংগঠিত এলাকায় বনরক্ষীদের টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টে যদি অগ্নিকান্ড মানব সৃষ্ট এমন রিপোর্ট পাওয়া যায় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।