প্রত্যাশিত বৃষ্টিতে শান্তির পরশ

0

আকরামুজ্জামান ॥ টানা দাবদাহের পর অবশেষে যশোরে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। অসহনীয় গরমের মাঝে বহুল প্রত্যাশিত এই বৃষ্টি মানুষসহ প্রাণীকূলের মাটে স্বস্তি এনে দিয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে কিছুক্ষণ ঝড়ো হাওয়া, এরপর আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে আসে। খরতাপে অতিষ্ট মানুষ বৃষ্টি উপভোগ করতে থাকেন। শহরের অনেক এলাকায় মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে স্বস্তি প্রকাশ করে দেয়া বৃষ্টির ছবি ভাইরাল হতে থাকে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমান ঘাটিতে অবস্থিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দুই দফা মোট ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত যশোরে রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৈশাখের শুরু থেকে বৃষ্টিহীন অবস্থা বিরাজ করছিল। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে এ অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠানামা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তা বেড়ে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। যা এ অঞ্চলের তাপমাত্রার দীঘ ৭ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে।
আবহাওয়ার গতিবিধি বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজশাহী ও যশোর দেশের ‘চরম আবহাওয়া’প্রবণ জেলা। রাজশাহীতে বছরে ১৫৫ দিন শীত অথবা গরম বেশি ছিল। যশোরে তা ১৫৩ দিন। এর পরে রয়েছে ঈশ্বরদী, ১৪৫ দিন। এছাড়া ঢাকায় বছরে ৫২ দিন বেশি শীত ও ৩৬ দিন বেশি গরম ছিল। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল কক্সবাজার। সেখানে মাত্র ৩২ দিন চরম আবহাওয়া ছিল। এবছর ঠিকই একই অবস্থা বিরাজ করে যশোরসহ এ অঞ্চলে। কিন্তু দীর্ঘ সেই তাপপ্রবাহ বৃষ্টির কারণে অবসান হয়। বৃষ্টির পর যশোরের আবহাওয়া শীতল হয়ে ওঠে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, সোমবার রাত ১১ টার পর থেকে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সাথে ছিলো ঝড়ো হাওয়া। মঙ্গলবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ৯ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় আরও ৯ মিলিমিটার। দুই দফায় মোট ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আগামী দুই থেকে তিনদিন এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা একটানা না হয়ে বিরতিহীনভাবে হতে পারে বলে বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিসের এক কর্মকর্তা জানান।
দীর্ঘ দাবদাহের মাঝে যশোরাঞ্চলে যখন স্বস্তির বৃষ্টি নেমে এসেছে তখন জেলার ৮ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে কৃষক বোরো ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে বৃষ্টিতে কৃষকের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। সাধারনত এ সময়ে বৃষ্টি জমিন স্পর্ষ করার সময় যে ধরণের ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে তা হয়নি। যেকারণে কৃষকের ক্ষেতের ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) দীপঙ্কর দাস বলেন, যশোরাঞ্চলে ৮০ শতাংশের বেশিও বোরো ধান কেটে কৃষক ঘরে তুলে ফেলেছেন। কিছু কৃষক বিলম্বে ধান কাটায় তাদের আবাদ ঘরে তুলতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে তা চলমান বৃষ্টির কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।