লকডাউনের মানে খুঁজতে হবে

0

করোনা মহামারি মোকাবেলায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন চলছে। কিন্তু রাস্তাঘাট, হাটবাজার, শপিং মল কোথাও লকডাউনের কোনো প্রভাব নেই। মার্কেটে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই নেই। অনেক ক্রেতা-বিক্রেতারই মুখে মাস্ক পর্যন্ত দেখা যায় না। রাস্তায় দূরপল্লার পরিবহন, বাস-মিনিবাস ছাড়া আর সব যানবাহনই চলছে। এর মধ্যে শুরু হয়েছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের কাফেলা। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে মোটরসাইকেল পর্যন্ত সব যানবাহনেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। অনেক শহরে রিকশায়ই তিনজন করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। ঢাকার বাইরে নসিমন-করিমনে যাত্রী পরিবহনের তো কোনো হিসাবই নেই। বিশেষজ্ঞের মতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য বাস-মিনিবাসের চেয়ে এসব যানবাহন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। শহর, গ্রাম কোথাও মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরে, কিন্তু তদারকি নেই কারো।
লকডাউনে মার্কেট, বেসরকারি অফিস, কারখানা খোলা থাকায় হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতে হয়। বাস-মিনিবাস না থাকায় রাস্তায় তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়, যে যানবাহন পাওয়া যায় ঝুঁকি নিয়ে তাতেই গাদাগাদি করে চলাচল করতে হয়। ভাড়াও গুনতে হয় কয়েক গুণ। তারা সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। অন্যদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়ও বড় ধরনের ত্রুটি বা অসংগতি হচ্ছে বলে মনে করেন অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। ৯ জন বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দেশে ২০২০ সালে মোট মৃত্যু হয়েছে আট লক্ষাধিক মানুষের। একই সময়ে করোনায় মারা গেছে আট হাজার মানুষ, যা মোট মৃত্যুর মাত্র ১ শতাংশ। এই ১ শতাংশ মৃত্যু কিছুটা কমাতে গিয়ে যেসব বৈষম্য করা হয়েছে, তাতে ৯৯ শতাংশ মুমূর্ষু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে লকডাউন দেওয়ার ফলে এই ৯৯ শতাংশ রোগীর স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। তাঁরা জানান, ২০২০ সালে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি জটিলতায় আগের বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে দেশের জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। যেমনটি ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা।
আমরা বারবার বলেছি, লকডাউন শুধু ঘোষণা করা নয়, মানুষ যাতে লকডাউনের সর্বোচ্চ সুফল পায় সেভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান লকডাউনের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা এবং নানা ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিবেচনা করতে হবে। অফিস-কারখানা খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক মনে হয় না। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষকে আরো বেশি ভোগান্তি ও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনাও আরো উন্নত ও সমন্বিত করতে হবে। অন্যান্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি লকডাউনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। লকডাউনে সর্বাদিক ক্ষতিগ্রস্ত মাঝারী পুঁজির ব্যভসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রণোদনা ও দীর্ঘমেয়াদী স্বল্প সূদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।