দাদার লাশ দেখতে গিয়ে খুলনার মীম হারাল মা-বাবা, ২ বোনকে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দাদার মৃত্যুর খবরে ঢাকার মিরপুরের বাসা থেকে তারা যাচ্ছিল গ্রামের বাড়ি। স্পিডবোট ডুবিতে মারা যায় মা-বাবা, দুই বোন। মীম একা একটি ব্যাগ ধরে ভেসেছিল নদীতে। পরে তাকে উদ্ধার করের পুলিশ। মীমকে উদ্ধারকারী নৌপুলিশের কনস্টেবল মেহেদী বলেন, শিশুটিকে নদীতে ব্যাগ ধরে ভাসতে দেখি। হাত ও চোখের কাছে আঘাতের চিহ্ন ছিল সামান্য। দ্রুত তাকে পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছেন। পরে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসের কর্মচারী জাকির হোসেন ও বাংলাবাজার স্পিডবোট ঘাটের নৈশপ্রহরী দেলোয়ার ফকিরের তত্ত্বাবধানে তাকে রাখা হয়। হাসপাতালের একটি কক্ষে দুপুরের খাবারও দেওয়া হয় মীমকে। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে মীম জানায়, তার সঙ্গে মা, বাবা ও ছোট দুই বোন ছিল। দুর্ঘটনার পর কাউকে দেখতে পায়নি সে। তার কোনো স্বজনও আসেনি। তার বাবা-মা ও বোনেরা বেঁচে আছে না মরে গেছে জানা নেই তার। তবে মা যে মরে গেছে শিশুমনে তা জানান দিয়েছে আগেভাগেই। বার বার ‘মায় মইরা গেছে’ বলে কাঁদছিল সে। ভাত খেতে খেতে শিশু মীম আরো জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদা গ্রামে। গত পাঁচ মাস আগে তাদের পরিবার মিরপুরে বাসা ভাড়া করে থাকছিল। দাদার মৃত্যুর খবর শুনে তারা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল। মীমের কথা শুনে জানা যায়, দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরোখাদা গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ছোট্ট মীম ও তার পরিবার। ঢাকার মিরপুরের ভাড়া বাসা থেকে মা, বাবা আর ছোট দুই বোনের সঙ্গে মীম সোমবার সকাল ৬টার আগে শিমুলিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটে ওঠে। স্পিডবোট চলাকালে ঘুমিয়ে ছিল মীম। কোলের ওপর ছিল কাপড়-চোপড় ভরা ব্যাগ। দুর্ঘটনার পর পানিতে ব্যাগ বুকে চেপে ভাসমান অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে মীম। এ সময় কেউ একজন এসে তাকে পানি থেকে উদ্ধার করে। হাত ও চোখের কাছে সামান্য আঘাত থাকায় দ্রুত স্থানীয় রয়েল হাসপাতালে নেওয়া হয় মীমকে। মা-বাবা আর বোনদের মৃত্যুর খবর শুনেছে মীম। এতবড় দুর্ঘটনায় বেঁচে গেলেও মৃত্যুভয়, সেই সঙ্গে আগামীর অজানা শঙ্কা আর সব হারানোর ব্যথায় কাঁদছে সাত-আট বছরের ছোট্ট মীম। কান্নারত অবস্থায় মীম বলে, আমরা দাদু বাড়ি যাচ্ছিলাম। দাদা মারা গেছেন, তাকে দেখতে। আমার আর কেউ নাই। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, শিশু মীমের বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, ছোট দুই বোন সুমি (৫) ও রুমি (৩) স্পিডবোট দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বাবা, মা ও দুই বোনের মরদেহসহ মীমকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরোখাদার উদ্দেশে অ্যাম্বুলেন্স রওনা দিয়েছে। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, শিশুটির বাবা, মা ও দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে শিশুটিকে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত হলে তাদেরও তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। সোমবার সকালে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।