হ্যাটট্রিক নিশ্চিত তৃণমূলের, তবে হেরে যাওয়া মমতা কি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের টানা তৃতীয়বারের মত পশ্চিমবঙ্গের মতায় যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গেলেও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদী পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জয়ের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক টুইটে মি. মোদী মিজ ব্যনার্জীকে ‘দিদি’ সম্বোধন করে লেখেন: মানুষের স্বপ্ন পূরণে এবং কোভিড মহামারি মোকাবেলায় কেন্দ্র সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য অব্যাহত রাখবে।
নন্দীগ্রামে নিজের আসনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেরে যাওয়ার খবর আসায় প্রশ্ন উঠেছে- দল সরকার গঠন করলে তিনি কি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন? ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩ ও ১৬৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশটির কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে হলে তাকে ভারতের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স হতে হবে ২৫ বা তার বেশি। তাকে রাজ্যের বিধানসভার সদস্য হতে হবে। আর বিধানসভার সদস্য না হয়েও কেউ যদি মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন, তাকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হবে। কেউ হেরে যাওয়ার পরও তার দল যদি সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় এবং দলের নির্বাচিত সদস্যরা যদি তাকে নেতা নির্বাচিত করেন, তাহলে তার মুখ্যমন্ত্রী হতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে ভোটে না জিতেও মুখ্যমন্ত্রী হলে তাকে ওই পদে বসার ১৮০ দিনের মধ্যে কোনো একটি আসন থেকে জিতে আসতে হবে। তা না পারলে ছেড়ে দিতে হবে পদ। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে দুটির ভোটগ্রহণ প্রার্থীর মৃত্যুতে স্থগিত রয়েছে। ফলে এর একটি আসনে ছয় মাসের মধ্যে জিতে এলেই মমতার মুশকিল আসান হতে পারে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার শুরুতে কেন্দ্রে মতাসীন বিজেপির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আভাস থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস বড় জয়ের আভাস স্পষ্ট হয়। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বলছে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিধানসভার ভোট হওয়া ২৯২টি আসনের মধ্যে ২০৪টি আসনে তৃণমূল আর ৮২টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল।
কলকাতার কালীঘাটে মমতার বাড়ির কাছে তৃণমূলের জোড়া ফুলের শিবিরে দুপুর থেকেই আনন্দ শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে পদ্মফুলের বিজেপির গেরুয়া শিবিরে আঙুল তোলা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে। গতকাল দুপুরে আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের শিরোনাম ছিল- ‘দিদিই ফিরছেন’। আর এনডিটিভি’র শিরোনাম- ‘সুপার ভিক্টরি ফর তৃণমূল’।
এদিকে নন্দীগ্রাম আসনে কে জিতেছেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই আসনে লড়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে ভোট গণনা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়ার পর ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ভোট গণনা হতে পারে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা আরিজ আফতাব জানিয়েছেন,এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রিটার্নিং অফিসার।
নন্দীগ্রামে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে তা নিয়ে শুরু থেকেই উত্তেজনা তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে। রবিবার রাজ্যের ২৯২টি আসনে পর পর ফল প্রকাশিত হলেও, নন্দীগ্রাম ঘিরে দুপুর থেকেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ভোট গণনা শেষে এই আসনে তৃণমূল নেত্রী ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের খবর আসে। পরে জানা যায়, মমতা নয়, জিতেছেন বিজেপির নেতা ও এক সময়ের মমতার সহযোগী শুভেন্দু অধিকারী। এর আগে এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকাসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো নন্দীগ্রামে মমতার জয়ের কথা জানিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, ১৭ রাউন্ড ভোট গণনার পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতে মমতার জয় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বলা হয়, সার্ভারে সমস্যার জেরে সঠিক ভাবে কিছু জানা যাচ্ছে না। তার পরেই ১৬২২ ভোটে শুভেন্দু অধিকারীর জয়ের খবর আসে। এর আগে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল, ১২০২ ভোটে নন্দীগ্রামে জয়ী হয়েছেন মমতা। সার্ভারের ত্রুটির জেরে দুপুরে এমনিতেই চল্লিশ মিনিট ভোট গণনা বন্ধ ছিল সেখানে। তার পর মমতার জয়ের খবর সামনে আসার পরও কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি কমিশন। তার পরেই জানা যায়, শুভেন্দু জয়ী হয়েছেন। তবে কমিশন এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালকে ফোনে শুভেন্দু অধিকারীর বলেন, ‘১৬২২ ভোটে জিতেছি আমি।’ অন্যদিকে সাংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রাম যা রায় দেব, মাথা পেতে নেব।’ এর কিছু পরে টুইট করে তৃণমূল জানায়, নন্দীগ্রামে গণনা এখনও চলছে। কোনও রকম জল্পনায় কান না দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয় ওই টুইটে। তবে দলের জয়ের জন্য বাংলার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলার জয়ের জন্য সকলকে অভিনন্দন। বাংলার জয়, মানুষের জয়। বাংলা আজ ভারতকে বাঁচিয়েছে।’ একই সঙ্গে নন্দীগ্রামের ফলাফল নিয়ে বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। তার অভিযোগ, ‘আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, রায় ঘোষণার পর কারচুপি হয়েছে।’