জমজমাট ঈদ বাজারে সংক্রমণের শংকা #সচেতনতার কথা মুখে, প্রয়োগ নেই

0

আকরামুজ্জামান॥ জমে উঠেছে যশোরের ঈদ বাজার। শহরের প্রতিটি বাজার এলাকায় ক্রেতার ভিড়। পরিবার ধরে আসছেন ক্রেতারা। ভিড় কালেক্টরেট মার্কেট এলাকার ফুটপাতের দোকানেও। ঈদ উৎসবের প্রস্তুতিতে ম্লান হয়ে গেছে মহামারীর শংকা। করোনা সংক্রমণ রোধে কোথাও চোখে পড়ছে না সতর্কতা। ক্রেতারা কেউই সচেতন নন মহামারী নিয়ে। সেই শংকায় শংকিত যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ জন্য দুষলেন ব্যবসায়ী নেতা ও পৌরসভার নিস্ক্রিয়তাকে। অভিযোগ করলেন সরকার যে শর্তে শপিংমল দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছিল তা মানা হচ্ছে না।
রোববার যশোর যশোর এইচএমএম রোড, কাপুড়িয়াপট্টি, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট (কালেক্টরেট), মুজিব সড়ক এলাকা, জেসটাওয়ার, সিটিপ্লাজাসহ বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে ঈদের কেনাকাটার জন্য ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এসব মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে কিংবা দোকানের ভেতওে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এমনকি অনেকের মুখে ছিলনা মাস্ক। অনেকে কেনাকাটা ছাড়াই শপিংমলগুলোতে ঘুরতে বেরিয়েছেন। দেখছেন নতুন কী কী কাপড় চোপড় এসেছে। এরমধ্যে শহরের এইচএমএম রোড ও কাপুড়িয়াপট্টি এলাকার দোকানগুলোতে ছিলো ক্রেতাদের বেশি চাপ। প্রতিটি দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সামান্যতম হুশ নেই। যে যার ইচ্ছামতো গায়ে গায়ে বসে কেনাকাটায় মত্ত।
বাজারে কথা হয় তানিয়া আফরোজ নামে এক তরুণীর সাথে। তিনি বলেন, একদিকে রোজা অন্যদিকে প্রচন্ড গরম সেজন্য ঈদের কেনাকাটা করতে বাজারে আসা হয়নি। আজ এসে দেখছি প্রচুর মানুষের ভিড়। কোথায় কী নতুন জিনিস এসেছে সেটি আগে দেখবো। তারপর কেনাকাটা করবো। তিনি বলেন, বাজারে এসে ভয় লাগছে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। দোকানগুলোর গেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকার কথা থাকলেও তা কোথাও দেখতে পেলাম না। শহরের মুজিব সড়ক এলাকায় অঞ্জনস নামের দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এসব গাড়ির মধ্যে অধিকাংশই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। তাদের পরিবারের সদস্যরা এসেছেন কেনাকাটা করতে। এখানে ঢোকার সময় ঠিকই হাতে হ্যান্ডস্যানিটাইজার মেখে ও মুখে মাস্ক পরে ঢুকছেন। কিন্ত ভেতরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি একেবারেই সবাই উদাসীন। ক্রেতারা একে অপরের গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে কেনাকাটায় মত্ত। এ সড়কের আড়ং নামের দোকানে কথা হয় যশোর শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আব্দুল আলিমের সাথে। তিনি সকালে শহরের এইচএমএম রোডের সিট ভান্ডারে কাপড় কিনতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে যে অবস্থা দেখলাম তা আসলে ভয় পাওয়ার মতো। পাশের দেশে বহু মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন। এসব দেখেও কেউ সচেতন হচ্ছে না। তিনি বলেন, এসব মার্কেটে কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও ওইসব মার্কেটে মোটেও মানা হচ্ছে না। যা খুবই দুঃখজনক।
যশোর জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট (কালেক্টরেট মার্কেট) এলাকায় কথা সুমাইয়া নামে এক গৃহবধূর সাথে। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে মার্কেট করতে এসেছেন। তার নিজের মুখে মাস্ক থাকলেও সন্তানদের মুখে কোনো মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে কেনো বাজারে এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই তো বের হচ্ছেন। তাইতো আমরাও বের হয়েছি। তাড়াতাড়ি কেনাকাটা করে বাসায় ফিরে যাবো। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। ওই মার্কেটের দোকানি সেলিম রেজা বলেন, আমরা ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বললেও তারা কোনো গুরুত্ব দেন না। আমরাও চাই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজারে আসুক, দোকানপাটও বেশিদিন খুলা থাকুক। এইচএমএম রোডের পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মফিজুল হক বলেন, লকডাউনের মধ্যে দোকানপাট খুলে দেয়া হলেও বেশ কয়েকদিন ধরে বাজারে ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। আজ কিছু ক্রেতা আসলেও বেচাকেনা হচ্ছে কম। তিনি বলেন, বাজারে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতারা আসেন সে জন্য আমরা সবাইকে উৎসাহিত করে আসছি। ক্রেতারা যাতে মাস্ক ছাড়া মার্কেটে না আসেন সে বিষয়ে বারবার বলে আসছি। কিন্তু এক শ্রেণীর ক্রেতা তা মানতে চান না। এটাই সমস্যা।
একই কথা বলেন, সিটিপ্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির নেতা এসআর আজাদ। তিনি বলেন, আমাদের মার্কেটে ঢুকতে হলে প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হচ্ছে। গেট থেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে ঢুকতে হচ্ছে। অথচ ভেতরে গিয়ে একশ্রেণি ক্রেতা তা ভুলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা চাইনা কোনো কারণে মার্কেট বন্ধ হয়ে যাক। ক্রেতা ও বিক্রেতারা বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুক এটাই চাচ্ছি। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সরকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখতে কিছু কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। এসব বিষয়ে আমরা যশোরের ব্যবসায়ীদের সাথে বসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছি। এখন যদি বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয় তাহলে অবশ্যই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। সংক্রমণ রোধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠাবোধ করবোনা।