বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরেছেন ৪৪৮ বাংলাদেশি, ফিরে গেছেন ৫০ জন ভারতীয়

0

সুন্দর সাহা॥ ভারতে করোনার নতুন ধরন রোধে বাংলাদেশ সরকার দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে ১৪ দিন যাতায়াত বন্ধ ঘোষণায় আটকেপড়া যাত্রীরা দূতাবাসের বিশেষ অনুমতিতে দেশে ফিরছেন। গত দুই দিনে দেশে ফিরেছেন আটকেপড়া ৪৪৮ জন এবং ভারতে ফিরে গেছেন ৫০জন। তবে নতুন করে পাসপোর্টযাত্রীদের ভারত ও বাংলাদেশ ভ্রমণ এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। ভারত সীমান্তে দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, অন্তত একদিন আগে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। তাহলে সীমান্তে এসে তাদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। ওপারে আটকে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী এবং শিক্ষার্থী।
ভারতের পেট্রাাপোলে আটকা পড়া বাংলাদেশিরা বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরছেন। গতকাল বুধবার (২৮ এপ্রিল) দেশে ফিরেছেন ৩০২ জন এবং ভারতে ফিরে গেছেন ১৭ জন পাসপোর্ট যাত্রী। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দেশে ফিরেছেন ১৪০জন এবং ভারতে ফিরে গেছেন ১৭ জন পাসপোর্ট যাত্রী। ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের বেনাপোল, শার্শা, ঝিকরগাছা, যশোর ও খুলনার বিভিন্ন আবাসিক হোটেল এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা নিজ খরচে সেখানে অবস্থান করবেন। কোলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন অফিস থেকে এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নিয়ে দেশে ফেরেন তারা। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ভারতে করোনার নতুন ধরন সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ সরকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থলপথে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করে। তবে নিষেধাজ্ঞাপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশি দূতাবাসের ছাড়পত্র থাকলে তাদের আসা যাওয়ার সুযোগ থাকবে। সোমবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকে দিনভর কোনো যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে না পারলেও হঠাৎ সন্ধ্যায় ছয় বাংলাদেশি দেশে প্রবেশ করেন। ফেরত আসা ৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ৫জন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশন অফিসে কর্মরত ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং একজন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড়।
এদিকে, বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দেরও দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে একটি ওয়েবসাইটে নির্দেশনা দেয় ভারতীয় দূতাবাস। এতে বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে দেশে ফেরার অনুমতিও পান। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৮ জন। আর গতকাল পর্যন্ত ভারতে ফিরেছেন ৫০ জন। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ভারত থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, কি“নিক ও হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদিকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের আরটিপিসিআরের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও তাদের বর্তমান শর্ত মানতে রাখা হচ্ছে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। এদিকে, সরকারের নিষেধাজ্ঞায় এ পথে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াতে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হলেও দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক রয়েছে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য। তবে নির্দেশনা অনুয়ায়ী, স্বাস্থ্যবিধি পালন হচ্ছে না বন্দরে। আমদানি পণ্যের প্রবেশদ্বারে নেই করোনা সংক্রমণ রোধ ব্যবস্থা। পণ্যবহনকারী ট্রাক চালক, শ্রমিক, নিরাপত্তাকর্মী কেউ যথাযথভাবে মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। এতে ঝুঁকি বাড়ছে সংক্রমণের। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশি উপহাইকমিশনারের ছাড়পত্র থাকায় আটকেপড়া যাত্রীদের কিছু ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো পাসপোট যাত্রী নতুন করে ভারতে যাননি এবং ভারত থেকেও কোনো ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আসেননি। বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, বন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা সবাই যাতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সেটি আবারও সচেতন করা হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতীয় ট্রাক চালকরা যাতে বন্দর থেকে বেনাপোল বাজারে চলে না যান, সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ভারতীয় ট্রাকচালকদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আনসার ও সিকিউরিটি ফোর্সের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।