আর কত প্রাণ দিতে হবে ?

0

এবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ছয়তলা ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে ওই ৬ তলা ভবনের আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে কমপক্ষে ২১ জন দগ্ধ হয়েছেন। প্রতি বছরই পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদামের কারণে একাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। বারবারই হতাহতের ঘটনা ট্র্যাজেডির রূপ নিচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ, প্রতিবাদের অন্ত নেই। অতীতে আমরাও সম্পাদকীয়তে একই সাবধানতার কথা বলেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কঠোর হচ্ছে না। ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালাদের বাধ্য করতে পারছে না দাহ্য রাসায়নিক আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে।
আরমানিটোলার আরমেনিয়ান স্ট্রীটের হাজী মুসা ম্যানশনে আগুনের ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। আগামী ১০ কার্যদিবসে প্রতিবেদন জমা দেবে এই কমিটি। আমরা আশা করব এবার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হবে সুপারিশমালা। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে মারা যায় ১২৫ জন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ ম্যানশনে রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণে লাগা আগুনে পুড়ে মারা যায় ৭১ জন। ওই বিস্ফোরণের কারণও ছিল কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্য। একইভাবে নিমতলীর আগুনের কারণও ছিল রাসায়নিক দ্রব্য, যা জুতার আঠা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। নিমতলীর মর্মান্তিক ঘটনার পর রাসায়নিকের গুদাম ও দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি পণ্যের কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেখানে রাসায়নিকপল্লী করার কাজও শুরু হয়। ৯ বছর পর চুড়িহাট্টার ঘটনার পরে গাজীপুরের টঙ্গী ও রাজধানীর শ্যামপুরে অস্থায়ীভাবে রাসায়নিকের ব্যবসা সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ মাঝপথে থমকে যায়। সরেনি রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা। অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যবসা বাড়িয়েই চলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবও।
যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের জীবনের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতার প্রকাশ ঘটবে, মানুষ দায়িত্বশীল হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এমন অপমৃত্যুর ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটতেই থাকবে। তাই আর নয়, এখনই এর একটা বিহিত হওয়া চাই। মানুষের জীবন নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলা নয়।