করোনাকালে চৌগাছায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম : বেড়েছে বাল্য বিয়ে ও শিশু শ্রম

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে চৌগাছায় শিক্ষা কার্যক্রম বলাচলে মুখ থুবড়ে পড়েছে। অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। বই খাতা ছেড়ে অনেকেই নানা পেশায় নিযুক্ত হচ্ছে, বেড়েছে বাল্য বিয়ে। বর্তমান অবস্থায় হতাশা না হয়ে অনলাইন ক্লাসে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের বই পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
এক বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত চৌগাছার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্ধ। এ সব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এক বছরের বেশি সময় ধরে অলস সময় পার করতে করতে অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের খুঁনসুঁটি যেন বৃদ্ধি পেয়েছে, তাদের পিতা মাতা শিশুদের কাছে এক প্রকার নাজেহাল। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। দিন মাস এমনকি বছর পার করেছে তারা, দেখা নেই বন্ধুদের সাথে, যেতে পারছে না প্রতিষ্ঠানে। বেশ কিছু শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী তা বুঝে উঠতে পারে না। পরিবারে অলস শুয়ে বসে থাকতে থাকতে অনেকেই যেন বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে বাল্য বিয়ে অন্যদিকে শিশু শ্রমও বেড়েছে আশংকাজনক হারে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চৌগাছার বিভিন্ন মোটরসাইকলে গ্যারেজ, গার্মেন্টস বা শাড়ি কাপড়ের দোকান, মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে শিশুরা মাসিক বা দিন চুক্তিতে কাজ করছেন। শুধু তাই না হাইস্কুল ও কলেজ পড়–য়া নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক ছেলে রাজধানী ঢাকা কিংবা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গিয়ে যাত্রীবাহী বাসের সহকারীর কাজসহ নানা কাজে নিযুক্ত হয়েছে বলে অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানিয়েছেন। শুধু তাই না করোনার গত এক বছরে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিশেষ করে কলেজ পড়–য়া মেয়েদের মধ্যে বড় একটি অংশের বিয়ে দিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর সদরের একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, এক বছরে তার কলেজের শুধু ২য় বর্ষের অন্তত ২০ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। অন্য এক কলেজের অধ্যক্ষ জানান তার কলেজ থেকে ৩৫ থেকে ৪০টি মেয়ে বিয়ে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে তারা পড়ার সাথে থাকত, নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যত তারা করতে পারত। গ্রামাঞ্চলের ছেলে মেয়েদের অভিভাবকের বড় একটি অংশ হয় অশিক্ষিত না হয় অসচেতন। যার ফলে ছেলে মেয়ে পিতা মাতাকে যাই বোঝাচ্ছেন অভিভাবক সেই কথায় সাড়া দিচ্ছেন, ফলে বাল্য বিয়ে ও শিশু শ্রম তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে চৌগাছা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হতে আমাদের ছেলে মেয়েরা এক বছরের অধিক সময় বঞ্চিত। অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও অনেক ছেলে মেয়েরা সেটি ভাল ভাবে বুঝে উঠে না। বর্তমান অবস্থায় ছেলে-মেয়ে কিংবা অভিভাবক কেউ হতাশা না হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি পরিবারের অভিভাবককে এই সময়ে বাচ্চাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করার পাশাপাশি তারা কোথায় যাচ্ছে কি করছে সেদিকে একটু নজর দিতে হবে। মহামারিকে জয় করে অবশ্যই আবার আমরা সুন্দর কিছু পাব বলে আমি আশা করি।