যশোরে তালাকপ্রাপ্ত চতুর্থ স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক হলেন পুলিশ কর্মকর্তা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে তালাকপ্রাপ্ত চতুর্থ স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসআই আজিজুল হক সবুজকে আটক করেছে কোতয়ালি থানার পুলিশ। গত শনিবার সকালে শহরের বারান্দীপাড়া ঢাকা রোডস্থ হাফেজিয়া মাদ্রাসার পাশের ওই নারীর বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাও হয়েছে কোতয়ালি থানায়। তবে পুলিশ বলছে, ধর্ষণের অভিযোগ করার পর ওই নারী ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে ফের এসআই আজিজুল হক সবুজকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ধর্ষণ ঘটনা আপসযোগ্য নয় বিধায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
অপরদিকে আটক এসআই আজিজুল হক সবুজকে গত রোববার পুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গৌতম কুমার মল্লিক এই আদেশ দেন।
বারান্দীপাড়া ঢাকা রোডস্থ হাফেজিয়া মাদ্রাসার পাশের বাসিন্দা ওই নারীর অভিযোগ, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার সুরুলিয়া গ্রামের আনোয়ারুল হকের ছেলে বর্তমানে যশোর সদর উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক সবুজের (৪৫) সাথে তার ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তিনি আজিজুল হক সবুজের চতুর্থ স্ত্রী। বিয়ের পর তিনি রঘুরামপুরে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করতেন। সেখানে স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ছেলে প্রান্ত (১৭) ও মেয়ে লাবনী (১৩) থাকতো। চাকরি সুবাদে তার স্বামী কর্মস্থলে থাকলেও মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসতেন। এরই মধ্যে তার স্বামী ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর গোপনে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দোহার গ্রামের আব্দুস সোবহান সরদারের মেয়ে লাবনী খাতুনকে (৩০) বিয়ে করেন। এরপর চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি একতরফাভাবে তাকে তালাক দেন। ফলে তালাক দেওয়ার পর থেকে তিনি বারান্দীপাড়া ঢাকা রোডস্থ হাফেজিয়া মাদ্রাসার পাশের নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। তিনি বাড়িতে একাকি বসবাস করেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১ টা ১০ মিনিটে তিনি নিজ ঘরে তাহাজ্জতের নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় নক করার শব্দ শুনে তিনি দরজা খুললে তার সাবেক স্বামী আজিজুল হক সবুজ ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েন। এরপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তার সাবেক এই স্বামী। আধাঘন্টা পর আজিজুল হক সবুজ বাথরুমে গেলে এই সুযোগে তিনি কৌশলে বেরিয়ে এসে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় তার ডাকাডাকি শুনে আশপাশ থেকে কয়েকজন নাইটগার্ড সেখানে ছুটে আসেন। এরই এক পর্যায়ে তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করলে কোতয়ালি থানার পুলিশ তার বাড়িতে আসে। পুলিশ এ সময় তাকে উদ্ধার করে এবং তালাকপ্রাপ্ত স্বামী হওয়ায় ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজিজুল হক সবুজকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় যাওয়ার পর পুলিশ তাকে ধর্ষণ ঘটনায় এজাহার দাখিল করতে বললে তালাকপ্রাপ্ত স্বামী হওয়ায় তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। তবে পরে তিনি আত্মীয় স্বজনদের সাথে আলাপ আলোচনা করে থানায় এজাহার দাখিল করেন।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, তারা ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার এবং আজিজুল হক সবুজকে আটক করেন। থানায় আনার পর আজিজুল হক সবুজের কাছ থেকে জানতে পারেন, ওই নারী তাকে ফের ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এরপর ধর্ষণ অভিযোগে আজিজুল হক সবুজ আটক হলে ওই নারী এবার তাকে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ধর্ষণ ঘটনা আপসযোগী নয়, সে কারণে নারীর অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজিজুল হক সবুজ এপিবিএনে কর্মরত। তাকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হলেও তিনি যোগদান করেননি।
ওসি আরো বলেন, ওই নারী আজিজুল হক সবুজের চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। আর নারীর এ পর্যন্ত তিনটি বিয়ে হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কমিউনিটি পুলিশিং) সুমন ভক্ত জানান, শনিবার সকাল ছয়টার দিকে ধর্ষণের অভিযোগে আজিজুল হক সবুজকে তারা আটক করেন । এরপর তারা তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ধর্ষণের মামলায় তাকে রোববার আদালতে সোপর্দ করেন। এছাড়া আসামির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধর্ষণ মামলায় আটক আজিজুল হক সবুজকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মামলা দায়েরের পর রোববার বিকেলে ওই নারী আদালতে গিয়ে সাবেক স্বামীর খোঁজখবরও নেন। এছাড়া তিনি সাবেক স্বামীর ছোটভাই হামিদুল হকের সাথেও কথা বলেন। পরে হামিদুল হকের মোটরসাইকেলে করে তিনি আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন!
উল্লেখ্য, তালাকপ্রাপ্ত এই চতুর্থ স্ত্রী সম্প্রতি প্রেস ক্লাব যশোরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আজিজুল হক সবুজের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং আরো কয়েক লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন। এ সময় আজিজুল হক সবুজ জানিয়েছিলেন, তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এবং অভিযোগ সত্য নয়।