নিষ্প্রাণ ড্র ম্যাচে কিছু পাওয়া না পাওয়ার গল্প

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ক্যান্ডির আকাশ ভেঙে যখন বৃষ্টি ঝরছিল তখন নিশ্চয়ই তামিম ইকবালের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো! পাল্লেকেলের রান প্রসবা উইকেটে সেঞ্চুরির মিছিলে তিনি কেন বাদ থাকবেন।
প্রথম ইনিংসে নিজের ভুলে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে আবার সুযোগ তৈরি করলেন। দরকার ছিল মাত্র ২৬ রান। পড়ন্ত বিকেলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েও ফেলতেও পারতেন। কিন্তু পূর্বের সূর্য যখন পশ্চিমে ডুবছিল তখন কর্তৃত্ব ছিল প্রকৃতির হাতেই। তাতে তামিমের আরেকটি তিন অঙ্কের আশা ডুবে যায়।
সঙ্গে ড্র হয় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি টেস্ট। শেষ বিকেলের সেশনের খেলা মাঠে গড়ায়নি। এর আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার নেওয়ার ১০৭ রানের লিডের বিপরীতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেটে তোলে ১০০ রান। শেষ বিকেল ফল পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। শুধুমাত্র তামিমের সেঞ্চুরির অপেক্ষা। প্রকৃতি বাধা না দিলে হয়তো হয়েই যেতো।
কিন্তু অগত্যা নিশ্চিত ড্র জেনে এক ঘণ্টা বাকি থাকতেই ‘সাদা পতাকা’ তোলেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। এ ড্রয়েও নিশ্চিত উদ্ভাসিত মুমিনুল হক। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা সবগুলো দলের বিপক্ষে হেরেছেন। এবার ড্রয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন। পাশাপাশি টেস্ট চ্যাম্পিয়নপের লড়াইয়ে প্রথমবার পেলেন ২০ পয়েন্ট। ফলে এ ড্র যে বাংলাদেশের জন্য মানসিক যুদ্ধে জয়ের রঙে রাঙানোও! ১২৩ টেস্টে এটা বাংলাদেশের ১৮ ড্র আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চতুর্থ।
ম্যাচটা নিষ্প্রাণ ড্র হলেও অতিথিরা পেয়েছে অনেক কিছু। অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল দুইহাত ভরে পেয়েছেন। পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি খরা কাটিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসে তার ঝলমলে ১২৭ রান দলে নিয়ে গেছে কাঙ্ক্ষিত কক্ষপথে।
সবুজাভ উইকেট দেখে পাল্লেকেতে প্রথমে বোলিং পেয়ে চোখ বড় হয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার পেসারদের। কিন্তু তাদের সব আক্রমণ থেমে যায় তামিমের ব্যাটে। দেশসেরা ওপেনারের প্রথম দিনের দুই সেশনের ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত হয়ে যায় অনেক কিছু। তামিম ৯০ রানের বীরোচিত ইনিংস খেললেও ১০ রানের আক্ষেপে পোড়েন। টেস্টে ৯ সেঞ্চুরির একটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নেই। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সুযোগ নিলেন। আগ্রাসন দেখালেন। স্পিনারদের ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা উড়ালেন তিনবার। নামের পাশে আরও ১০ বাউন্ডারি। সেঞ্চুরির মঞ্চ এবারও প্রস্তুত। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি পণ্ড করে সব।
ম্যাচে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নাজমুল হোসেন শান্তকে ফিরে পাওয়া। বারবার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারছিলেন না ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছোটানো এ ক্রিকেটার। এবার পারলেন। নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়ে খেললেন ১৬৬ রানের ইনিংস। প্রথম ইনিংসে যতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে ছিল ঠিক উল্টো। সুরাঙ্গা লাকমলের গতিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন শূন্য রানে। টেস্টে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও শূন্যের পঞ্চম ঘটনা এটি। এর আগে জাভেদ ওমর, মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ও সাকিবের ভাগ্যে এমনটা হয়েছিল।
পাওয়ার ম্যাচে না পাওয়ার হিসেবেও আছে। মুমিনুল ও শান্ত সেঞ্চুরি পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু কেউই করুণারত্নের মতো ডাবল ছুঁতে পারেননি। সুযোগ হেলায় ভাসিয়েছেন। হতাশ করেছেন ওপেনার সাইফ হাসান। প্রথম ইনিংসে শূন্যের পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১। দ্বিতীয় টেস্টে সাদমানের জন্য দরজাও খুলে দিলেন তিনি।
উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু ছিল না। বল মুভমেন্ট ছিল সামান্য। স্পিনাররা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেননি। তার মধ্যেও বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ নিজের ফিরে আসার বার্তা দিয়েছেন ভালোভাবে। তিন বছর পর সাদা পোশাকে ফিরে তিন দিন মিলিয়ে মোট বোলিং করেছেন ৩০ ওভার। ৬ মেডেনে ১১২ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। পঞ্চম দিন সকালে ডাবল সেঞ্চুরিয়ান করুণারত্নকে শর্ট বলে শর্ট মিড উইকেটে তালুবন্দি করানোর আগে সেঞ্চুরিয়ান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোল্ড করেন। লঙ্কান অধিনায়ক ২৪৪ ও ধনাঞ্জয়া ১৬৬ রান করেন। তাদের দৃঢ়চেতা ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের করা ৫৪১ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ৬৪৮ রান করেন।
বোলিংয়ে বাকি দুই পেসার ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ। বোলিংয়ে ন্যুনতম সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। ইবাদত ছিলেন নির্বিষ। বোলিংয় বারবার লাইন ও লেন্থ হারিয়েছেন। আবু জায়েদ রাহী উইকেট থেকে সাহায্য না পাওয়ায় মেলে ধরতে পারেননি। ঠিক স্পিনাররাও তাই। মেহেদী হাসান মিরাজ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৫৮ ওভার করেছেন। তাইজুল ইসলাম হাত ঘুরিয়েছেন ৪৫ ওভার। দুজন ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। ড্র ম্যাচে বোলিংয়ে পাওয়ার থেকে না পাওয়ার হাহাকারই বেশি।
পাল্লেকেতে মাঠে নামার আগে ১০ ম্যাচে ৯টি ছিল হার। নিষ্প্রাণ ড্রয়ে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও গৌরব খুঁজে নিতে পারে। ২৯ এপ্রিল থেকে একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। তার আগে ভুলগুলো শুধরে নিলে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো কিছু পেতেও পারে অতিথিরা।