সাইবার অপরাধ নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা নিন

0

দেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর অন্যতম দেশকে তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেওয়া। এরই মধ্যে দেশ এ খাতে যথেষ্ট এগিয়ে গেছে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির মোবাইল, ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের সহজলভ্য হচ্ছে। একইভাবে তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের পরিমাণও দ্রুত বেড়ে চলেছে। ক্রমেই অধিক হারে নিরীহ মানুষ এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের মধ্যে আছে ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধ। দিন দিনই বাড়ছে এসব অপরাধের পরিধি। আর্থিক খাতে বিকাশের অর্থ লোপাটের পর এসেছে অনলাইন বাণিজ্য প্রতারণা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে ৯২.২০ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে ইন্টারনেটে একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর মাধ্যমে নিপীড়িতদের ৬৯.৪৮ শতাংশই আপনজনের দ্বারা নিগ্রহের শিকার। ৩৩.৭৭ শতাংশের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও অপরাধীর মধ্যে প্রেমঘটিত সম্পর্কের তথ্য উঠে এসেছে। আর ৩৫.৭১ শতাংশ ঘটনায় অপরাধী ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত। প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিষয়ে দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা না হলে এই সামাজিক ব্যাধি আরো ভয়াবহ রূপ নেবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জন্য রাষ্ট্র যেমন ব্যবস্থা নিতে পারে, তেমনি সামাজিক ও পারিবারিকভাবেও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধে দেশীয় সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারে রাষ্ট্র। অন্যদিকে সন্তানদের সাইবার অ্যাক্টিভিটির ওপর মা-বাবার নজরদারিও প্রয়োজন। আবার বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য সাইবার অপরাধবিষয়ক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি দরকার। অনলাইন ক্রেতা, অর্থ লেন-দেনকারী ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদেরও সচেতন হতে হবে। পাসওয়ার্ডসহ ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা কাউকে দেওয়া যাবে না। অনিরাপদ অ্যাপ ব্যবহার করার ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। হয়রানির ঘটনা গোপন না রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানাতে হবে। সর্বোপরি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সচেতনতাই সাইবার অপরাধ অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। তবে আইনের কঠোর ব্যবহারও জরুরি। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ নির্মূলে বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী করা হবে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা।