যশোর পৌরসভার দেনা মেটাতে লোকবল কমিয়ে ব্যয় সংকোচন

0

তহীদ মনি॥ যশোর পৌরসভার নতুন মেয়র ৯১ কোটি টাকা দেনা মাথায় নিয়ে দায়িত্বে বসেছেন। এই দেনা মেটাতে লোকবল কমিয়ে ব্যয় সংকোচন করতে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ। এ অবস্থায় অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন অনিয়মিত (মাস্টাররোল) কর্মী কাজ হারাতে যাচ্ছেন।
গত ১৩ এপ্রিল নব নির্বাচিত মেয়র মো. হায়দার গনী খান পলাশ দায়িত্ব বুঝে নেন। সে সময়ে সাবেক ও বর্তমান মেয়রের স্বাক্ষরিত এক হিসেবপত্রে দেখা যায় নতুন মেয়র মোট ৯০ কোটি ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৩৪ টাকা দেনা নিয়ে দায়িত্ব শুরু করছেন।
পৌর দফতর থেকে সংগৃহীত ওই হিসাব পত্রের বিবরণ অনুযায়ী দেনার খাতগুলো হলো বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২৩ কোটি ১৭ লাখ ৩ হাজার ৩৫৪ টাকা, বেতন ভাতা ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫১২ টাকা, নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্রাচ্যুইটি বাবদ ২১ কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৪৮০ টাকা, অবসর ভাতা (পিএফ ও গ্রাচ্যুইটি) ৮ কোটি ৫৫ লাখ ১৫ হাজার ৪১৮ টাকা, জ¦ালানি তেলের বকেয়া বিল ৭১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৫ টাকা, ঠিকাদারি বিল বকেয়া ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৮ টাকা, এডিবি মাঝারি শহর পানি প্রকল্পে দেনা ২০ কোটি টাকা, ঠিকাদারি জামানত ৬২ লাখ ২ হাজার ৯৯৬ টাকা, বকেয়া খাজনা ২ কোটি ৭৬ লাখ ৮ হাজার ৫৩১ টাকা, পৌর হেরিটেজ নির্মাণ ও পানির লাইন তৈরি (ইজিআইআইপি-৩) প্রকল্পে লোন ৫ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, বিধি বিল খাতে দেনা ৩০ লাখ টাকা, সিডিএফ বকেয়া ১৬ লাখ ৮০ হাজারসহ মোট ৯০ কোটি ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৩৪ টাকা।
নবনির্বাচিত মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, পৌরসভার কোনো দেনা বা বকেয়া তিনি রাখবেন না। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি মাস্টাররোলে কর্মরত অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই করে মাসিক খরচ কমাবেন। আপাতত এখন ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মচারী কমাবেন বলে জানিয়েছেন। তালিকা সম্পূর্ণ না হলে সঠিক সংখ্যা জানাতে পারবেন না বলে মেয়র জানান।
গত মঙ্গলবার পৌরমেয়রের সাথে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ দেখা করতে গিয়ে জানান, তাদের এক কর্মী মাস্টাররোলে কাজ করতেন, তাকে অব্যাহতি পত্র দেয়া হয়েছে। সূত্র মতে এরূপ কেউ কেউ পাওয়া পত্র পাওয়া শুরু করেছেন।
পৌর দফতর থেকে জানা যায়, পৌরসভায় এখন মাস্টার রোলে ১২২ জন কর্মরত রয়েছেন, এর মধ্যে সাবেক মেয়র যাওয়ার আগে ৪৫ জনকে (গত কয়েক মাসের মধ্যে) যুক্ত করেছেন। এছাড়া নিয়মিত কর্মচারী রয়েছে ২৫০ জনের বেশি।
এত বিপুল কর্মী বাহিনীর বেতন ভাতা টানার ক্ষমতা এখন যশোর পৌরসভার নেই বলে জানান মেয়র পলাশ।
তবে তিনি আশ^াস দিয়েছেন অচিরেই পৌর ঋণ শোধ হবে। এরপর আবার মাস্টার রোলে কর্মচারী নিয়োগ দেবেন।
তিনি জানান, পৌর বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় কর্মী মাস্টাররোলে নেওয়া যায়, তবে বেতন দিতে না পারলে নিয়ে কী লাভ?
এই কর্মী ছাঁটাইয়ে কি দেনা শোধ সম্ভব? প্রশ্নে মেয়র জানান, আপাতত ঠিকাদারি বিল পরিশোধ করা হবে নাা, তাছাড়া চলতি বছর পাইপ লাইনে কয়েক শ’ কোটি টাকার কাজ পৌরসভার জন্যে রয়েছে। তিনি চেষ্টা করছেন সে কাজ যত দ্রুত চালু করা যায়। এ জন্যে ইতোমধ্যে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও তিনি নিচ্ছেন। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। সে সব কাজ শুরু হলে দেনার পরিমাণ অনেক কমে আসবে।
মেয়র হয়দার গনী খান পলাশ বলেন, ঘুষ-দুর্নীীত করতে দেবো না এতে সঠিক কাজ হবে, উন্নয়ন হবে, দেনা কমবে।
প্রসঙ্গক্রমে মেয়র জানান, শহরের কিছু রাস্তাঘাট বাদে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন খুবই জরুরি। সেসব এলাকার বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থাও নাজুক। তিনি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে মাপ-জোক, জরিপ শুরু করিয়েছেন। খুব শিগগিরই অনুন্নত রাস্তা-ড্রেন-বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার কাজ শুরু হবে।