চৌগাছায় ধান কাটতে গাতা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় করোনা মহামারীর এই সময়ে মাঠের পর মাঠ বোরো ধান পাকা শুরু হয়েছে। করোনাকালে চাষিরা সেভাবে ধানকাটা মজুর না পেয়ে বহু বছর আগে গ্রামীন জীবনে পরিচিত গাতা করে ধান কাটতে শুরু করেছেন। এতে করে সামাজিক বন্ধন যেমন সুদৃঢ় হবে, তেমনি অল্প খরচে সকল কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।
মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রতি দিনই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। এমন পরিস্থিতিতে সরকার দেশব্যাপী দুই সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছেন। বিগত বছরগুলোতে বোরো ধান পাকা শুরু হলেই দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে শ্রমিক উপস্থিত হত উপজেলার প্রতিটি গ্রামে। কিন্ত এবার লকডাউনের কারণে শ্রমিক আসা প্রায় বন্ধ, অন্যদিকে ধান পাকা শুরু। কৃষকরা অন্য কোন চিন্তা না করে নিজেদের মধ্যে গাতা (পালা) করে ধান কাটা শুরু করেছেন।
চাষিরা জানান, একদিন আশেপাশের সকলে মিলে একজনের জমির ধান কেটে পরের দিন অন্য জনের। তারপর দিন আরেক জনের, এভাবে সবার জমিতে মিলেমিশে ধানকাটার এই পদ্ধতিতে খরচ কম।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বাদেখনপুর মাঠে যেয়ে দেখা যায় একদল কৃষক প্রখর রোদে ধান ক্ষেতে কাজ করে যাচ্ছেন।
ওই গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে কৃষক রিপন হোসেন বলেন, আগাম রোপণকৃত ধান ইতোমধ্যে পাকা শুরু হয়েছে। আর ৮/১০ দিনের মধ্যে মাঠের অধিকাংশ ধানই পেকে যাবে। ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। যারা আছেন তারা ১ বিঘা ধান কাটতে ২৫শ’ টাকা খরচ চান। শ্রমিক খচর বেশি তাই আমরা মহল্লার বেশ কিছু কৃষক মিলে গাতা করেছি। প্রত্যেকেরই মাঠে কমবেশি ধান আছে। যার ধান আগে পেকেছে তার ক্ষেতে আমরা আগে কাজ করছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে পর্যায়ক্রমে সবার ধান কেটে ঘরে তুলতে পারব বলে মনে করছি।
কৃষক শিমুল হোসেন, কামারুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, রিপন হুসাইন, জামিল হোসেনসহ গাতায় প্রায় ১০/১২ জন সদস্য আছে। গাতার সকল সদস্য অত্যান্ত প্রাণবন্ত ও একে অপারের কষ্ট ভাগাভাগি করে নেয়ার ফলে দ্রুতই কাটা হচ্ছে ধান। মহামারি করোনার এই সময়ে প্রতিটি গ্রামের চাষিরা এমন একত্রিত হয়ে কাজ করলে সহজেই বোরো ধান ঘরে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইচউদ্দিন বলেন, আর কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। আমরা কৃষককে ধান কাটা, ঝাড়া এমনকি বস্তা ভরার মেশিন দিয়েছি। কৃষক এতে উপকৃত হচ্ছেন। তবে গ্রামে দলবদ্ধভাবে কাজ করাকেও তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন। এতে করে পরস্পর সকলেই উপকৃত হবেন। তাছাড়া সকলের সাথে সকলের সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে বলেও তিনি মনে করেন।