রহমতের বরিষায় সিক্ত হবার মাস রমজান

0

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ : আজ ৮ রমজান। ইতোমধ্যে গত হয়েছে ছয়-ছয়টি রোজা। রোজা রাখার মানসিকতাটা অনেকেরই থাকে। শিশু, কি যুবক, কি তরুণ, বৃদ্ধ প্রত্যেকে রোজাব্রত পালন করতে চায়।
রোজা যেহেতু একটি ফরজ ইবাদত এ কারণে কেউ এটি পরিত্যাগ করতে চায় না। আমরা আজ এ কলামে রোগীদের রোজা রাখার ব্যাপারে ডাক্তারদের কিছু পরমর্শ তুলে ধরছি।
ডাক্তাররা বলেন নিয়ম মেনে রোজা পালন করলে সাধারণত সমস্যা হয় না, বরং রোজা রাখলে শরীরের উপকার হয়। এরপরও রোজাদারদের বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয় যেমন-
হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা : পাকস্থলীতে খাবার হজম করার জন্য সব সময় এসিড থাকে। এই এসিডে আবার খাদ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়াও মারা যায়। কিন্তু পাকস্থলীর গাত্রে থাকা বিশেষ পিচ্ছিল আবরণ নিজেকে এসিডের হাত থেকে বাঁচায়। তবে কোনো কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসিড তৈরি হলে বা পাকস্থলীতে খাবার না থাকার সময় এসিড নিঃসরণ হলে অথবা পাকস্থলী থেকে এসিড ইসোভেগাসে (খাদ্যনালির অংশ) চলে এলে বুক জ্বলে। রোজার সময় এই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি অনেকের হয়।
সাধারণত রোজা রাখলে এসিড কম তৈরি হওয়ার কথা, কিন্তু ক্ষুধা পেলে ও খাবারের কথা চিন্তা করার কারণে কারও কারও এসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। তাদের হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যা বেশি হয়।
এ সমস্যায় এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সেহরি খাওয়ার সময় এ জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে ওষুধ খেয়ে হার্টবার্ন দূর করার চেয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে করা বেশি ভালো। পরিহার করতে হবে তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, বাসি ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার। তা ছাড়া ধূমপান করার অভ্যাস থাকলে তা থেকে এই সময়টা বিরত থাকতে হবে। যাদের টক ঢেকুর আসে, বুক জ্বলে তারা শোয়ার সময় একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। যাদের আগেই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি আছে তারা এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল ইত্যাদি ওষুধ একটু বেশি মাত্রায় খেতে পারেন। সেহরির পাশাপাশি ইফতারের পরপর এ ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
মাথাব্যথা : রোজায় খুব কমন সমস্যা এটি। বেশ কিছু কারণে মাথাব্যথা হয়। বড় কারণ পানিশূন্যতা, ক্ষুধা, ঘুম ও রেস্ট কম হওয়া, চা, কফি পান না করা। সমস্যাটি কম হবে যদি সেহরি মিস না হয়, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি ও জুসজাতীয় তরল বেশি করে খাওয়া যায়। যাদের মাথাব্যথার সমস্যা রোজায় প্রতিদিনই হয় তারা সেহরিতে একটা প্যারাসিটামল খেতে পারেন। রোদে যাবেন না, ছাতা ব্যবহার করবেন, সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শমতো রোজা রাখবেন।
কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য : রোজায় এ সমস্যা বেশি হয়। এর কারণ পানিশূন্যতা ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া। বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে বিশেষ করে ইসবগুলের ভুসি, তবে লাল আটা ও ঢেঁকিছাঁটা চাল খেতে পারলে ভালো উপকার পাবেন। এরপরও সমস্যা থাকলে ল্যাক্সেটিভ ওষুধ খেতে পারেন।
হার্ট কিডনি ও অন্যান্য অসুখ : রোজা রাখার ফলে হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নেই। আবার এসব অসুখ থাকলে রোজা রাখা যাবে না তেমনটিও ডাক্তাররা বলেন না। তবে যারা এসব অসুখে আক্রান্ত কিন্তু রোজা রাখছেন এবং কোনো সমস্যা বোধ করছেন তাদের উচিত ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া।
বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা : অনেকে মনে করেন, রোজা রাখলে বুকের দুধ কমে যায়। ফলে সন্তান দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। এ কথাটি একদমই ভুল। কেননা রোজা রাখলে বুকের দুধ কমার কোনো আশঙ্কা নেই। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সেহরি ও ইফতারের সময় প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। ইফতারের পর শোয়ার আগ পর্যন্ত ঘণ্টায় ঘণ্টায় অল্প অল্প করে পানি খেতে হবে।
অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগী
রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নেয়া যাবে কি না এ ব্যাপারে রেসপিরেটরি ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম মোশারফ হোসেন জানান, ইনহেলার নিলে রোজা নষ্ট হবে কি না চিকিৎসক হিসেবে তা বলা মুশকিল। যতটুকু জানি ওষুধ সরাসরি রক্তে মিশে গেলে রোজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সঠিক নিয়মে ইনহেলার নিলে রক্তে ওষুধ মিশতে পারে না বা নগণ্য পরিমাণ মিশতে পারে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার পরামর্শ হলো সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার নিন। আর হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিন।