মানুষকেও বাস্তবতা বুঝাতে হবে

0

দেশে প্রথমবারের মতো টানা ৪ দিন করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ গত পরশু সোমবার ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত পরশু সোমবার বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আগামী কয়েক দিন এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ রোগী যত বাড়ে, দুই সপ্তাহ পর থেকে মৃত্যুও সেই অনুপাতে বাড়ে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে হাসপাতালে রোগীর ভিড় অত্যধিক বেড়ে গেছে। মাত্র ১৬ দিনে রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। আইসিইউ শয্যা তো দূরের কথা, অনেক হাসপাতালে সাধারণ শয্যাও খালি নেই। বেসরকারি হাসপাতালেও একই অবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমেছে এবং ২২-২৩ শতাংশের কাছাকাছি স্থির হয়েছে। এখন লকডাউন ও অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা যদি কিছুটা বাড়ে, তাহলে সংক্রমণের হার নিচে নামতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের ভিন্ন কথাই বলে। লকডাউনের আগে দলে দলে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। যাওয়ার পথে ন্যূননতম স্বাস্থ্যবিধিও মানা হয়নি। লকডাউনের পর একইভাবে তারা ফিরে আসবে। লকডাউনে মানুষ বড় রাস্তায় না গেলে গলিপথে ভিড় করছে। আড্ডা জমাচ্ছে। সন্ধ্যার আগে ইফতার কেনায় জটলা তৈরি হয়েছে। মসজিদে-বাজারে একই অবস্থা। হোটেল-রেস্তোঁরায় বসে খাওয়া নিষিদ্ধ হলেও পর্দা টানিয়ে ভেতরে বসে খেতে দেখা গেছে। জরুরি চলাচলের সুযোগে প্রায় বিনা প্রয়োজনে বহু মানুষকে রাস্তায় বের হতে দেখা গেছে। এ রকম হলে সংক্রমণ কমবে কিভাবে?
চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, ছুটির দিনে রাস্তায় প্রচুর যানবাহন, অনেকটা স্বাভাবিক সময়ের মতো। যানবাহনের বেশির ভাগ মালিক এমন সব অজুহাত দেখান, যা লকডাউনে বের হওয়ার মতো নয়। তাঁরা শুধু নিজের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলছেন না, অন্যদের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। রাস্তার পাশে, গলির মুখে অনেককেই জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। মানুষ নিজে সচেতন না হলে, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিজে না বুঝলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তাদের সামাল দেওয়া কি সম্ভব হবে? এক শ্রেণির মুসল্লি ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষকে বলতে শোনা যায়, আমাদের করোনা হবে না। অথচ, গত কয়েক দিনে হাসপাতালের সামনে বহু নিম্ন আয়ের মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে। সরকার চেষ্টা করছে হাসপাতালের শয্যা ও আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে। কিন্তু এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আইসিইউ পরিচালনার মতো অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানের অভাব রয়েছে। অনেক জেলা হাসপাতালে আইসিইউয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে এবং তা সচল করতে হবে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাসপাতাল বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। প্রয়োজন হচ্ছে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা। এ জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে আমাদের ভয়ংকর পরিণতির জন্যই অপেক্ষা করতে হবে। আমরা আশা করবো, মানুষ বাস্তবতা উপলব্ধি করে নিজের করণীয় নিজেই ঠিক করবেন।