সবার বাসায় ইফতার ডেলিভারি দিয়ে নিজেরা সারেন রাস্তায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥মোহাম্মদ সাজিদুল রাজধানীর কলেজ শিক্ষার্থী। ক্লাস বন্ধ থাকায় গত বছর থেকেই ফুড ডেলিভারির কাজ করছেন। আয় করে সাহায্য করছেন পরিবারকে। যে সাজিদুলের সামনে মা ইফতারি সাজিয়ে দিতেন, সে সাজিদুল এখন অন্যদের ইফতার পৌঁছে, নিজে করছেন রাস্তায়। শুধু সাজিদুল নয়, ফুড ডেলিভারিতে যুক্ত সবার গল্পই এমন।
মাগরিবের আজানের সময় চারদিকে সুনসান নিরবতা। রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে দেখা গেলো একটি ছোট জটলা। দেখা গেলো কয়েকজন বসে ইফতার করছেন। পাশে একগাদা সাইকেল। পোশাক দেখেই বোঝা যায় তারা খাবার ডেলিভারির কাজে যুক্ত।
রাস্তায় ইফতার করলেও তাদের বিমর্ষ দেখা গেলো না। মেনু সীমিত হলেও উচ্ছ্বলতার অভাব নেই তাদের মধ্যে। শেষ মুহূর্তের ডেলিভারিটা শেষ করেই চটজলদি বসে পড়েছেন একসঙ্গে।
লকডাউনে অর্ডার বেড়েছে
দুপুর ৩টা থেকে ডেলিভারির কাজ শুরু করেছিলেন সাকিব। ৮টি বাসায় ইফতারের আইটেম পৌঁছে দিতে পেরেছেন। ফুডপান্ডার কাজ করেন তিনি। গ্রাহকের বাসায় সময়মতো ডেলিভারি দিতে পেরে বেশ খুশি।
ইফতারের আগ মুহূর্তেও ডেলিভারি দিতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও বাসায় গিয়ে ইফতার করার সুযোগ নেই। যেখানে থাকি, সেখানেই ইফতার। কখনও একা, কখনও অন্য ডেলিভারিম্যান ভাই জুটে যায়।
নেত্রকোনার মো. সায়মন সংসারের হাল ধরতেই ঢাকায়। দুই বছর ধরে তার আয়ের উৎস ফুড ডেলিভারি। নেত্রকোনার একটি কলেজের ছাত্র তিনি। গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ইফতারের সুযোগ এমনিতেও নেই তার। সায়মন বললেন, জীবনের বাস্তবতা আমার সামনে। অনেক কিছু চাইলেও করতে পারি না। গ্রাহকের অর্ডার পেলেই রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নিয়ে ছুটে যাই।
লকডাউনে বিক্রি বেড়েছে অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিস প্লাটফর্মগুলোর। তবে অফিস থেকে ইফতারের ব্যবস্থা নেই তরুণ ডেলিভারি-কর্মীদের জন্য। পকেটের টাকাতেই ইফতার সারতে হয় তাদের।
মো. মাসুদকে দেখা গেলো বেশ ক্লান্ত। অল্প সময়েই ১২টি ডেলিভারি সারতে হয়েছে। সাইকেল চালাতে হয়েছে দ্রুত। মাসুদ জানালেন, ইফতারের সময় অর্ডার বেশি হয়। আর বেশি অর্ডার মানে বেশি আয়। সামনে ঈদ। ছোট ভাই-বোনদের জন্য কিছু কিনতে হবে। তাই বেশি ডেলিভারির চেষ্টা করছি।
পরিবারের সঙ্গে ইফতারের মুহূর্তগুলো মিস করেন তানজীল। কিন্তু ফুড ডেলিভারির কাজে সেই সুযোগ নেই। তবে তিনি জানালেন ভিন্ন এক অনুভূতির কথা। বললেন, ‘অনেকের বাসায় দেখা যায় বাইরে যাওয়ার মতো মানুষ নেই। তাদের বাসায় ডেলিভারি দিতে পারলে ভালোই লাগে।’