করোনায় কর্মজীবী নারীদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার হয়েছেন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥খুলনার খালিশপুরে একটা পাটকলে কাজ করতেন আলেয়া বেগম। গত বছর বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে তার কাজও চলে যায়। আলেয়া বেগম বলছেন, গত বছরের জুলাই মাস থেকে এখনো তিনি বেকার রয়েছেন।
জমি কেনার জন্য ৯০,০০০ টাকা ঋণ করেছিলেন, সেই ঋণ শোধ করা থেকে শুরু করে দিনযাপন করাই এখন তার জন্য বড় কঠিন বিষয়।বাংলাদেশের দু’টি বেসরকারি সংস্থার হিসেব বলছে, করোনা মহামারীর সময় আলেয়া বেগমের মতো কাজ হারিয়েছেন এমন অনেক নারী।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জরিপে বলছে, গত বছর জুন মাসে ৩২ ভাগ নারী কাজ হারিয়েছে ও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নেমে এসেছে ৩১ শতাংশে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলছেন, যারা কাজ হারিয়েছেন ও কাজে ফিরতে পারেননি তারা মূলত কল-কারখানা, ঘর-গৃহস্থলী ও দিনমজুরের কাজ করতেন।
মহামারীর কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এদের মাঝে আছে হত-দরিদ্র ও মাঝারি দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বেশি।
এদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা এক শ্রেণীর মানুষ যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন পোর (ভিএনপি)।
দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার ওপরে কিন্তু মধ্যম জাতীয় আয়-সীমার নিচে থাকা এই শ্রেণীর মানুষদের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে।
গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষদের ৭২ ভাগ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিলো। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে।
সেই ‘নতুন দরিদ্র’দের ৫০ ভাগ এখনো ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। এই হার শহরে ৫৯ ভাগ এবং গ্রামে ৪৪ ভাগ।গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ১৪ দশমিক ৮ ভাগ ‘নতুন দরিদ্রের এই হার বিগত বছরের জুনে ছিলো ২১ দশমিক ২ ভাগে।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা যাতে ঘুরে দাঁড়ান সেজন্য দেয়া হয়েছে সরকারি সহায়তা। কিন্তু একেবারে তৃণমূলে যেসব নারী কর্মীরা রয়েছেন তারা পড়েছেন বিপাকে।
অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকরা বলছেন, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেটা এই ব্যক্তি পর্যায়ে নারীদের জন্য নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, যেসব নারীরা বেকার রয়েছেন তাদের কাজে ফেরাতে তাৎক্ষণিক এবং স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে করোনার কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ,সেখানে গ্রামাঞ্চলে ৪৪ শতাংশ।
সূত্র : বিবিসি