বছরের মাঝামাঝি দাম ব্যারেলে ৭০ ডলার ছাড়াবে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও সামনের দিনগুলোতে বৈশ্বিক চাহিদা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জ্বালানি তেল সরবরাহ করার কথা ওপেক প্লাসের। তবু অন্য উৎপাদনকারী দেশগুলোতে জ্বালানি পণ্যটির উৎপাদন হার নিচে রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এ কারণে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে জ্বালানি পণ্যটির মূল্য আরো বাড়বে বলে শঙ্কা তাদের। এমনকি এ সময়ে ব্যারেলপ্রতি জ্বালানি তেলের দাম ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বৈশ্বিক চাহিদার প্রভাব থাকবে বলে তারা মনে করছেন। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
বর্তমানে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের ডেটেড ব্রেন্টের (নির্ধারিত তারিখে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ডেলিভারি দেয়া) দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের নিচে রয়েছে। গত নভেম্বরে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকেই জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়তে শুরু করে। এ সময়ের মধ্যে ডেটেড ব্রেন্টের দাম ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। তবে করোনাভাইরাসের শঙ্কা ধীরে ধীরে কমে আসায় জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও ফের বাড়বে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের জ্বালানি বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস মতে, চলতি বছরের মাঝামাঝিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে ব্যারেলপ্রতি দাম ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সরবরাহ ও চাহিদার অসামঞ্জস্যে আগামী মে মাস থেকেই এমনটা শুরু হবে। আগস্টে তা পূর্ণ মাত্রা পাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি চীন ও ভারতের মতো জ্বালানি তেলের বড় ভোক্তা দেশগুলো তাদের আমদানি কমিয়ে দেয়, তাহলে অনেক ওপেক প্লাস দেশ তাদের উৎপাদন কমিয়ে নিয়ে আসবে। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের ভোক্তা ও উৎপাদক, উভয় পক্ষই চাইবে লাভবান হতে। এতে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে উভয় পক্ষের উচিত জ্বালানি তেলের দামকে একটি সহনশীল মাত্রায় রাখা।
জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও আগামী বছরগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ কমে যাওয়ার সতর্কতা সংকেতগুলো এখনই চোখের সামনে জ্বলন্ত হয়ে আছে, তা সত্ত্বেও ভোক্তা দেশগুলোর জ্বালানি তেলের জরুরি চাহিদা সে বিষয়টিকে অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে। করোনা মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে চাইছে ভোক্তা দেশগুলো। সেজন্য তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত জ্বালানি তেলের। অন্যদিকে বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় উৎপাদন কমিয়ে দেবে উৎপাদক দেশগুলো।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, জ্বালানি তেলের বিশাল ঘাটতির কারণে আগামী বছরগুলোতে প্রকল্পগুলোয় বিশাল পরিমাণ ব্যয় করার সম্ভাবনা রয়েছে ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর। তবে নতুন প্রকল্পগুলোতে বড় অংকের বিনিয়োগের পরও জ্বালানি তেলের চাহিদা ও ঘাটতির ব্যবধানটি কমিয়ে আনতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হবে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে জ্বালানি তেলের স্বাভাবিক দাম এবং ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর জ্বালানি তেল উৎপাদনের মধ্যে একটা দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।
এদিকে ওপেকবহির্ভূত দেশগুলোর অনুমোদিত জ্বালানি তেলের খনিগুলোতে এরই মধ্যে বিশাল পরিমাণে বিনিয়োগের নজির রয়েছে। ঘাটতি পূরণে কোনো কোনো প্রকল্প থেকে এখন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করে যাচ্ছে দেশগুলো। অন্যদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শেল অয়েল বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেল উৎপাদন কমেছে। বিশ্লেষকদের মতে, কভিড-পূর্ব অবস্থায় সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চলতি দশকের মাঝামাঝি সময়ের আগে সে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারবে না দেশটি। মূলত এসব কারণে ঊর্ধ্বমুখী হবে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজার।