পণ্যের দামে দিশেহারা মধ্যবিত্ত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত লকডাউনে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। পণ্যের দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নাভিশ্বাস অবস্থা সমাজের মধ্যবিত্ত লোকদের।
দেশব্যাপী লকডাউনের ফলে খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের পথ অনেকটা বন্ধ হয়েছে। রাজধানীতে যানবাহন কম থাকায় একেক বাজারের পণ্যে দাম একেক ধরনের। বাজারে সঠিক পর্যবেক্ষণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা যে যার মত করে দাম বাড়িয়ে পণ্য বিক্রি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন পণ্য দাম কমার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে যত সহযোগিতাই করা হোন না কেন তার সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, করোনাকালীন সমাজের উচ্চ শ্রেণির লোকেরা ছাড়া সব শ্রেণির লোকেরার চাপে রয়েছে। সমাজের দুটি শ্রেণিকে নিয়ে কথা হয় কিন্তু মধ্যবিত্ত নিয়ে তেমন কথা হয় না। তাদের সমস্যাগুলো সনাক্ত করে সেগুলোর সমাধানে সরকারকে কখনো কাজ করতে দেখা যায়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকারি ব্যবস্থপনার কারণে দেশে পণ্যের দাম বাড়ে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন সময় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে হঠাৎ হঠাৎ করে যে অভিযোগ পরিচালনা করে তা লোক দেখানো। এভাবে অভিযান করে কখনো পণ্যে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বা যাবে না।
সালেহউদ্দিন বলেন, আমরা কেনো ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসি না যে, তোমাদের কাছে কি পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। এটা দিয়ে কত দিন চলবে। তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য নিয়ে তবেই না সরকার সিদ্ধান্ত নিবে যে কোনো পণ্য কি পরিমাণ আমদানি করতে হবে। এর পর যদি পণ্যের দাম বাড়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাদের গোডাউনের মজুদকৃত পণ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে করে সেই ব্যবসায়ীকে দেখে অন্য ব্যবসায়ী শিক্ষানিতে পারে। অন্যথায় সম্ভব নয়।
লকডাউনে পণ্যে বাড়ায় এবং আয় কমে যাওয়া সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণিরা এখন লোকলজ্জা ছুড়ে ফেলে লাইন দিচ্ছে টিসিবির পণ্য সেল ট্রাকের সামনে। দিন যত যাচ্ছে মধ্যবিত্তের লাইন তত দীর্ঘ হচ্ছে। প্রচ- রোদ-গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন তারা।
বাজারে এখনো চাল, তেল, ডাল, চিনি, পিয়াজসহ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। এরমধ্যে রমজান ও লকডাউন ঘিরে নতুন করে বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে কম মূল্যে পণ্য কিনতে টিসিবি’র ট্রাকসেলে ভিড় করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতদিন টিসিবি’র লাইনে সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদেরই বেশি দেখা যেত।
রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি পাকা টমেটো বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা। প্রতিকেজি শসা বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮০-১০০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ৫৫-৬০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি শসা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিকেজি পটোল বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা। পাশাপাশি গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটি শুক্রবার ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। শিম প্রতিকেজি আবারও ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিলো ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। প্রতি পিস লাউ আগে ছিলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা। সাত দিন আগে ছিল ৩৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৫০, সোনালি ২৮০ ও লেয়ার ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকার মধ্যে। তবে খাসির মাংসের দাম কিছুটা বাড়তি; প্রতিকেজি চাওয়া হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর তেজগাঁওর বেগুনবাড়ী এলাকায় টিসিবির ট্রাকসেলের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এখানে নিম্নয়ের লোকদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত লোকদেরকেরও দেখা গেছে। রোদে ও গরমে ঘেমে একাকার। কেউ কেউ বলছিলো, এভাবে ট্রাকে পণ্য বিক্রি না করে যদি দোকানে বিক্রি করতো তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। এটা দেখতে কেমন দেখায়। আমি আমার পকেটের টাকা দিয়ে পণ্য কিনবো সেটা আবার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তাও আবার প্রচ- এই রোধে। আমরা মধ্যম আয়ের দেখে প্রবেশ করছি কিন্তু আমাদের কিছু পদ্ধতি এখনও সেই পুরোনো দিনের রয়েছে।
মালিবাগ রেলগেটের টিসিবির ট্রাকসেলের বিক্রেতা মিজান জানান, লকডাউনে এখন সব শ্রেণির লোকাদেরকে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য দিনে দেখা যায়। তিনি বলেন এখানে সমাজের ভালো পর্যায়ের লোকেরাও আসে। আগের তুলনায় ভিড়ও বেড়েছে। অনেকেই পণ্য না নিয়ে ফিরে যেতে হয়। কারণ যে পরিমাণ লোক দাঁড়ায় সেই পরিমাণ পণ্য আমাদের ট্রাকে থাকে না। যদিও আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে ট্রাকে পণ্য দেয়া হয়।
টিসিবি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীর ১০০টি স্থানে ট্রাকসেলের মাধ্যমে কয়েকটি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সারাদেশে ৫০০ এর বেশি ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ট্রাকের জন্য বর্তমানে ৬০০ কেজি ডাল ও ৪০০ কেজি ছোলা বরাদ্দ থাকছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় ট্রাকগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও বেড়েছে। সেজন্য পণ্যের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।