শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া লঞ্চে মিললো আরও ১৯ মরদেহ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় লাইটার জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া সাবিত আল হাসান লঞ্চ থেকে আরও ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রাতে আরও পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মোট ২৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি টেনে নদীর পূর্বপাড়ে তুলে। পরে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা ১৯টি মরদেহ উদ্ধার করে।
মরদেহগুলো শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিমপাড় কয়লাঘাট এলাকায় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। নিহতদের স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করছেন। এরইমধ্যে ১৯টি মরদেহের মধ্যে পাঁচটি শনাক্তের পর স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারি।
ইতোমধ্যে নিহতদের ১৯ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন আজমির (২), খাদিজা, নয়ন (২৮), সাদিয়া (১১), জেবু (১৩), আব্দুল খালেক (৭০), সাইদা আক্তার লতা (১৮), মাকসুদা বেগম (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৪৫), মহারানী (৩৭), শাহ আলম মৃধা (৫৫), পার্বতী রানী দাস (৪৫), তাহমিনা (২০), হাফিজুর রহমান (২৪), প্রতিমা দাসী (৫৩), বিথী (১৮), সখিনা (৪৫), সুনিতা সাহা (৪০), রুনা আক্তার (২৪) ও বেবী বেগম।
তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারের পর আজ ১৯টিসহ মোট ২৪টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক তালিকায় থাকা ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। লাশগুলো স্বজনদের কাছে একে একে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরও জানান, লাশ দাফন ও পরিবহনের জন্য স্বজনদের হাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার করে টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর সাদেক জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করে অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর পর বিআইডব্লিইটিএ’র কর্মকর্তারা ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। সবার যৌথ সহযোগিতায় দুপুর সাড়ে ১২টায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করে নদীর পূর্ব তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সার্চ করে মৃতদহেগুলো উদ্ধার করে নৌপুলিশসহ জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে নৌ চ্যানেলটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছেই। আর এতে প্রাণ হারায় বেশিরভাগ মুন্সীগঞ্জের মানুষ। কারণ মুন্সীগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষই নৌপথে যাতায়াত করেন। দুর্ঘটনা এড়াতে বারবার অনুরোধ করা সত্বেও রাতের বেলা লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ করা যায়নি। একের পর এক বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।
তিনি বলেন, এই বিষয়ে জাতীয় সংসদেও কথা বলেছি। তবু মৃত্যুর মিছিল থামানো যায়নি। তিনি প্রশাসনের কাছে শীতলক্ষ্যার সরু চ্যানেলে লাইটার জাহাজ নোঙর করে রাখা বন্ধ এবং নৌ দুর্ঘটনা রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে দুর্ঘটনার পর রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লা্হ জানিয়েছিলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, একই ঘটনায় চার সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।