ফাইনালে হারের পর কারো সঙ্গে কথাই বলেননি ক্ষুব্ধ সালাউদ্দিন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফ্লাইট সিডিউলের কারণে বিকেলের ফাইনাল রেখে দুপুরেই কাঠমান্ডু ছাড়তে বিমানবন্দরে পৌঁছেলিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এবং অন্য কর্মকর্তারা; কিন্তু সোমবার যে উড়োজাহাজে করে তাদের দেশে ফেরার কথা ছিল, সেটি যে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু গিয়ে ঘন কূয়াশার কারণে নামতেই পারেনি ত্রিভুবন এয়াপোর্টে! তাই না স্টেডিয়ামে, না দেশে- বাফুফে সভাপতিকে নেপালের বিপক্ষে ফাইনাল দেখতে হয়েছে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে বসে টিভিতে।
ফাইনালের আগে দলকে উজ্জীবিত করতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। টিম ম্যানেজারের মাধ্যমে ফুটবলারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, ‘চ্যাম্পিয়ন হলে পুরস্কার ২১ লাখ টাকা।’ সবাই মিলে ২১ লাখ মাত্র! ক্লাব থেকে তো একেকজন এর চেয়ে দ্বিগুণ-আড়াইগুণ টাকা পান। হয়তো তাই বাফুফে সভাপতির পুরস্কার ঘোষণা উজ্জীবিত করতে পারেনি ফুটবলারদের।
কাজী সালাউদ্দিনের জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা। যে শহরে নিজের দেশ ফাইনাল খেলছে সেই শহরের বসেই খেলা দেখতে হচ্ছে টিভিতে। তাও বিমানবন্দরে আটকা পড়ে। স্টেডিয়ামে গিয়ে ফাইনাল দেখতে না পারাটা হয়তো ভালোই হয়েছে তার জন্য। এতটা বিশ্রী ফুটবল স্টেডিয়ামে বসে কি আর দেখতেন এই কিংবদন্তী ফুটবলার?
জাতীয় দলের পেছনে প্রচুর বিনিয়োগ। লক্ষ্য ভালো ফলাফল; কিন্তু নেপালের এই টুর্নামেন্ট চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে- বাংলাদেশের ফুটবল কেবল র্যাংকিংয়ে অবনমন হচ্ছে না, মানও কমছে দিনদিন। বিশেষ করে জাতীয় দলের। ঘরোয়া ফুটবল খেলে ৪-৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া নেপালিদের সামনে ৫০-৬০ লাখার বাংলাদেশিদের রীতিমতো অসহায়ই মনে হয়েছে। ফুটবলারদের এই অসহায়ত্ব দেখে পরেরদিন বাফুফে সভাপতি ঢাকায় ফিরেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ফুটবলাররা নেপাল থেকে ট্রফি নিয়ে ফিরবে- দেশের মানুষ সে আশা করেই অপেক্ষায় ছিল। বাফুফে সভাপতি যে কারণে বড় অংকের পুরস্কারও ঘোষণা করেছিলেন; কিন্তু কোনো আবেগই ছুঁতে পারেনি কোচ জেমি ডেকে।
ভীনদেশি এই কোচ যে কারণে ফাইনালে মাঠে নামিয়েছিলেন অদ্ভূত এক একাদশ। সোহেল রানাকে না রাখার কারণে একাদশ নিয়ে শুরুতেই বড় প্রশ্ন ছিল। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া এই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারকে এক মিনিটের জন্যও মাঠে নামাননি কোচ।
কচি-কাঁচাদের দিয়ে ডিফেন্স সাজিয়ে টুটুল হোসেন বাদশাকে নামিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। মাহবুবুর রহমান সুফিলকেও বদলি হিসেবে খেলিয়েছেন। নেমেই ব্যবধান কমিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। বাফুফের অনেকের মতেই শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে জেমির কারণে।
তিনি জুনের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালাকে বানিয়েছিলেন পরীক্ষাগার। এই পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে জেমি তো বাংলাদেশের সঙ্গেই রঙ্গ-তামাশা করলেন। জুনে কাতারে গিয়ে তিনি কী কোনো পয়েন্ট আনতে পারবেন? নাকি দলকে এশিয়ান কোয়ালিফাইংয়ে টিকিয়ে রাখতে পারবেন?
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কয়েক কোটি টাকা খরচ করছেন বিদেশি কোচিং স্টাফের পেছনে। ফুটবলারদের দিচ্ছেন সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা; কিন্তু নেপালের স্থানীয় কোচিং স্টাফ ও ৪-৫ লাখ টাকা বেতন পাওয়া ফুটবলাদের কাছেই নাস্তানাবুদ বাংলাদেশের ‘রাজকীয় দলটি।’
ফাইনালের পর বাফুফে সভাপতি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে তার সফরসঙ্গীদের সূত্রে জানা গেছে, ম্যাচ শেষ হওয়ার পর হোটেল ফেরা পর্যন্ত কারো সঙ্গে কথাই বলেননি কাজী সালাউদ্দিন। পরে একাদশ, ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এত বিনিয়োগ করার পর এমন খেলা? হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশের ফুটবলের এই অভিভাবক।
কিছুদিন আগে দেয়া এক সাক্ষাতে বাফুফে সভাপতি বলেছিলেন- এখন থেকে তিনি জাতীয় দলের খেলা দেখতে সব জায়গায় যাবেন। কিন্তু নেপালের টুর্নামেন্টের পর তাকে কী মাঠে টানতে পারবেন তারই উত্তরসূরীরা?